Logo

জাতীয়

ভোটের মাঠে নিরাপত্তা বলয়, আসছে ডিজিটাল নজরদারি

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ২১:৫২

ভোটের মাঠে নিরাপত্তা বলয়, আসছে ডিজিটাল নজরদারি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে তফসিল ঘোষণার আগে, চলাকালীন এবং ভোটের পর— এই তিন ধাপে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। এই ধাপটি সরাসরি ইসির নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও নির্বাচনী সহিংসতার ঝুঁকি কমাতে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে প্রশাসন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় থাকবে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে। বহিরাগত অনুপ্রবেশ রোধ, প্রার্থীদের সমান প্রচার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং ভোটারদের নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগে কাজ করবে এসব বাহিনী।

পাশাপাশি নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে থাকবেন, যাতে কোনো হয়রানি বা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। ভোটের পরবর্তী ৯৬ ঘণ্টা নিরাপত্তা বাহিনী সক্রিয় থাকবে সহিংসতা প্রতিরোধে। একই সঙ্গে দুই দিন চলবে সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম।

এবারই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ডিজিটাল সার্ভিল্যান্স প্রযুক্তি বিবেচনা করছে ইসি। প্রস্তাব অনুযায়ী সিসিটিভি ক্যামেরা, ফেস রিকগনিশন সফটওয়্যার, ড্রোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটরিং, মোবাইল ট্র্যাকিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার হতে পারে। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং সহিংসতা বা আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রতিরোধ সহজ হবে বলে মনে করছে ইসি।

নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন কমিটি গঠিত হবে, যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নিরপেক্ষ ও সম্মানিত ব্যক্তিরা থাকবেন। উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভিজিল্যান্স টিমও কাজ করবে।

তফসিল ঘোষণার পর প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে মনিটরিং কমিটি গঠিত হবে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। এ কমিটি আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে।

ভোটের আগের দিন সকাল ৮টা থেকে ভোটের পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত (৭২ ঘণ্টা) আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইসির কেন্দ্রে উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল কাজ করবে। এতে ইসির একজন সিনিয়র কর্মকর্তার নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার-ভিডিপি ও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি থাকবেন। প্রতি দেড় ঘণ্টা পরপর কমিশনকে হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হবে, জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ প্রতিবেদনও পাঠানো হবে। মাঠপর্যায়ের সব তথ্য ‘আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং অ্যাপ’-এর মাধ্যমে সরাসরি সেলে পৌঁছাবে।

গত জাতীয় নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন ছিল। এবার সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগে সিইসির সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় সভায় বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে দিকনির্দেশনা চূড়ান্ত করা হবে।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর বিভাগীয় পর্যায়েও প্রশাসন, বাহিনী ও প্রার্থীদের নিয়ে সমন্বয় সভা হবে। লক্ষ্য— ভোটের দিন শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করা।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপত্তা নজরদারির বাইরেও এবারের নির্বাচন ঘিরে ইসির নিজস্ব মনিটরিং সিস্টেম থাকবে, যেখানে প্রার্থীর আচরণ, নির্বাচন পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নজরে রাখা হবে।

নির্বাচন কমিশনের আইনশৃঙ্খলা প্রস্তুতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে চায়— এটি তাদের কার্যক্রম দেখে বোঝা যাচ্ছে। নির্বাচন ঘিরে ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং ডিভাইস ব্যবহারের প্রস্তাব আসছে। তবে এসব ডিভাইস ব্যবহারে নেটওয়ার্ক ত্রুটি, সাইবার নিরাপত্তার দুর্বলতা, প্রযুক্তির অপব্যবহার ও গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি থাকে। এ বিষয়গুলোতে বিশেষ নজর দিতে হবে, তাহলেই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল মিলবে।

নির্বাচনকালীন সময়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বড় চ্যালেঞ্জ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাইকে নিয়ে আমরা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই, যাতে মানুষ নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর