সড়কের ‘অ্যাটম বোমা’ আয়ুষ্কালহীন সিএনজি অটোরিকশা
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২১:৪৮

সারাদেশে নিবন্ধিত সিএনজি ও এলপিজি চালিত অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৩২ হাজার। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ গাড়ি ১৮ থেকে ২৪ বছর ধরে রাস্তায় চলছে। শুধু তাই নয়, অনিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যাও ৩ লাখের বেশি। এর অর্ধেকেরও বেশি আবার ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলাচল করছে সড়কে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ এসব গাড়িই এখন একটি ‘অ্যাটম বোমা’র মতো। তাদের মতে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে এসব গাড়ি দিয়েই যেকোনো সময় বড় ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অথচ এসব গাড়ির আয়ুস্কাল নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বারবার আবেদন করলেও তাতে কোনো কর্ণপাত করছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সংস্থাগুলো।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর করা আবেদনের প্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় আয়ুস্কাল নির্ধারণের বিষয়ে একাধিকবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) সুনির্দিষ্ট মতামত দিতে চিঠি পাঠায়। তবে রহস্যজনক কারণে বিআরটিএ কোনো মতামত দেয়নি।
ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও সারাদেশে এসব গাড়ির আয়ুস্কাল নির্ধারণের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয় বিআরটিএকে চিঠি পাঠিয়েছিল, এমনকি তাগিদপত্রও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিআরটিএ অহেতুক সময় নষ্ট করেছে। এর দায় কার?
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৩ লাখ ৩২ হাজার নিবন্ধিত অটোরিকশার মধ্যে দেড় লাখই ১৮ থেকে ২৪ বছর ধরে চলছে। এগুলোই একের পর এক দুর্ঘটনার কারণ। যাত্রী ও চালক উভয়ই প্রাণ হারাচ্ছেন। তবুও মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ নীরব।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সিএনজি ও এলপিজি চালিত গাড়ির আয়ুস্কাল নির্ধারণে বিআরটিএর ভূমিকা রহস্যময়। সংস্থাটি ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে, যার ফলে সারাদেশে গাড়িগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় চলছে। এতে যাত্রীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।
এ পরিস্থিতির মধ্যে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র সিলেট জেলার অটোরিকশার আয়ুস্কাল নির্ধারণের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সভা ডেকেছে।
মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব জসিম উদ্দিন বাংলাদেশের খবরকে জানান, সিলেট জেলা থেকে আবেদন এসেছে। তাই সভা ডাকা হয়েছে। সভায় কী সিদ্ধান্ত হবে, তা সভা শেষে জানা যাবে। অন্য জেলা থেকে কোনো আবেদন আসেনি। আবেদন করতে হবে।
তবে শ্রমিক নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, সারাদেশের জন্য ইতিমধ্যেই আবেদন করা হয়েছে। কয়েকটিতে বিআরটিএ থেকে মতামতও পাঠানো হয়েছে। তবুও কেন ঝুলে আছে? শুধু সিলেটকেই অগ্রাধিকার দিয়ে সভা ডাকা হয়েছে কেন?
তারা আশঙ্কা করছেন, সিলেটে আয়ুস্কাল নির্ধারণ হলে শুধু ওই জেলার গাড়িই নিরাপদ হবে। কিন্তু সারাদেশের ৬ লাখেরও বেশি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত অটোরিকশা থেকে যাবে একই ঝুঁকিতে।
শ্রমিক নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, মন্ত্রণালয় কি শুধুই সিলেটকে নিরাপদ করতে চায়, বাকি সারাদেশকে অনিরাপদ অবস্থায় ফেলে রাখতে চায়?
এমএইচএস