
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা— রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান— সংসদীয় তিনটি আসন ভেঙে আটটি করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সোমবার (২৫ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় আসন সংক্রান্ত শুনানিতে জেলার প্রতিনিধিরা এই দাবি তুলে ধরেন।
প্রতিনিধি দলে থাকা পাইশিখই মারমা জানান, পার্বত্য এলাকায় সাতটি সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয় রয়েছে এবং প্রতিবেশি দেশগুলো এসব সংগঠনের সন্ত্রাসীদের সহায়তা দিচ্ছে। পার্বত্য বিশাল এলাকায় যদি আটটি আসন না করা হয়, কখনো এখানে শান্তি ফিরে আসবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন বাংলাদেশের এক-দশমাংশ; খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার আয়তন ১৩ হাজার ২৯৫ বর্গকিলোমিটার এবং মোট জনসংখ্যা ১৮ লাখ ৪২ হাজার ৮১৫ জন।
বর্তমানে তিনটি পার্বত্য জেলায় মাত্র তিনটি সংসদীয় আসন রয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনজন সংসদ সদস্য ২৬টি উপজেলার মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন, যা কার্যত অসম্ভব। বিশেষ করে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটির আয়তন ২৫ হাজার ১১৬ বর্গকিলোমিটার, ১০টি উপজেলা এবং ২০২২ সালের জনশুমারী অনুযায়ী ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৭ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ১৮ হাজার ২১৫ জন। এত বিশাল এলাকায় একজন এমপির দায়িত্ব পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
শুনানি শেষে রাঙামাটির বাসিন্দা সৈয়দ ইবনে রহমত বলেন, একজন সংসদ সদস্যের কাজ হলো আইন প্রণয়ন এবং জনগণের সমস্যার কথা সংসদে তুলে ধরা। কিন্তু রাঙামাটির সাজেক ইউনিয়নের আয়তন ঢাকা জেলার তুলনায় অনেক বেশি। ঢাকা জেলায় ২০টি সংসদীয় আসন থাকলেও রাঙামাটিতে মাত্র একটি। ফলে প্রতিটি ইউনিয়নের মানুষের সঙ্গে এমপির যোগাযোগ করা প্রায় অসম্ভব।
তিনি আরও বলেন, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলাতেও একই পরিস্থিতি বিদ্যমান। পার্বত্য চট্টগ্রামে এমপির সংখ্যা বাড়ানো হলে ছোট ছোট জনগোষ্ঠীরও নেতৃত্ব গঠনের সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদে তাদের সমস্যা তুলে ধরা সম্ভব হবে। এতে সশস্ত্র সহিংসতা কমানোও সম্ভব।
পার্বত্যবাসী তাদের প্রস্তাবিত আটটি সংসদীয় আসনকে এভাবে বিন্যস্ত করার দাবি জানিয়েছেন—
- খাগড়াছড়ি-১: রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষীছড়ি ও গুঁইমারা
- খাগড়াছড়ি-২ : মাটিরাঙা, মহালছড়ি, পানছড়ি
- খাগড়াছড়ি-৩ : খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা
- রাঙামাটি-১ : বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল
- রাঙামাটি-২ : সদর, কাউখালি, ননিয়ারচর
- রাঙামাটি-৩ : জুডাছড়ি, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, রাজস্বলী
- বান্দরবান-১ : সদর, রুমা, থানছি, বোয়াংছড়ি
- বান্দরবান-২ : লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যাংছড়ি
তাদের দাবি, এই নতুন বিন্যাস কার্যকর হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের উন্নয়ন, নেতৃত্ব গঠন এবং শান্তি ফেরানোর পথে সহায়ক হবে।
এসআইবি/এমএইচএস