কারাগারের নাম বদলে হচ্ছে ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৩০

ছবি : বাংলাদেশের খবর
“জেলখানা নয়, এখন থেকে এটি হবে সংশোধনাগার”—এমন ভাবনা থেকেই দেশের কারাগারের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’ করার উদ্যোগ নিয়েছে কারা অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কারা সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
তিনি জানান, শুধু নাম পরিবর্তন নয়, বদলে ফেলা হচ্ছে বন্দি ব্যবস্থাপনার পুরোনো ধারা। যুগোপযোগী করতে ‘কারেকশন সার্ভিস অ্যাক্ট-২০২৫’র খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ‘কারাগারকে শুধু শাস্তির জায়গা নয়, সংশোধনের ক্ষেত্র হিসেবেই দেখতে চাই। এজন্যই এই পরিবর্তন। বন্দিদের পুনর্বাসন ও সংশোধনের দিকে এখন বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
বর্তমানে দেশের কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৫ হাজার হলেও বন্দি সংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি। এই চাপ কিছুটা কমাতে নতুন দুটি কেন্দ্রীয় ও চারটি জেলা কারাগার চালু করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বন্দি ব্যবস্থাপনার চাপ হ্রাসে ঢাকা বিভাগকে ভেঙে দুটি নতুন কারা বিভাগ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, কারাগার ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের জনবল সংকট দূর করতে ১ হাজার ৮৯৯টি নতুন পদ অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আরও ১ হাজার ৫০০ পদের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি কারা সদর দপ্তর ও বিভাগীয় কারা কার্যালয়গুলোও ঢেলে সাজানো হয়েছে।
আইজি প্রিজন দাবি করেন, বর্তমানে সব কারাগার নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। চালু করা হয়েছে ডিজিটাল হাজিরা, টিম ট্র্যাকার, বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার ও অও-নির্ভর সিসিটিভি। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জন্য বডি ক্যামেরা ব্যবহারেরও প্রচলন শুরু হয়েছে। বন্দিদের সাক্ষাৎ ও ফোনকল ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে হটলাইন নম্বর ১৬১৯১।
বন্দিদের খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। সকালের নাস্তা ও বিশেষ দিবসের বরাদ্দও বৃদ্ধি করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জে একটি আধুনিক কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও ধর্মীয় কাউন্সেলিং চালু করা হবে। অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষীদের আজীবন রেশন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। চালু হচ্ছে সুদ-বিহীন ঋণ ও স্বাস্থ্যসেবা স্কিম। শারীরিক সক্ষমতা নিশ্চিত করতে বাধ্যতামূলক পিটি-প্যারেড চালু করা হয়েছে।
গত এক বছরে মাদকের সঙ্গে জড়িত ২৯ জনকে বরখাস্তসহ ফৌজদারি মামলায় পাঠানো হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে ৩৪ জন চাকরিচ্যুত, ৪৪০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং ১৭২ জনকে বদলি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আইজি প্রিজনের দাবি, ‘আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। ইতোমধ্যে ৬৯১ জন কারারক্ষীসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের আধুনিক প্রযুক্তি ও পেশাগত দক্ষতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
এনএমএম/এএ