বিদেশি কূটনীতিক ও রাজনৈতিক নেতাদের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন

ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৬:০৩

ছবি : বাসস
বিদেশি কূটনীতিক, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠনসহ দেশের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজতে কক্সবাজারে ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক অংশীজন সংলাপের শেষ দিনে উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন তারা।
পরিদর্শকরা রোহিঙ্গা শিবিরের জীবনযাপন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, খাদ্য সরবরাহ এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা বিশেষভাবে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) পরিচালিত খাদ্য কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং ইউএনএইচসিআরের স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদন কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। এ সময় তারা রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জ, দীর্ঘ অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা জানতে পারেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, অংশগ্রহণকারীদের সরেজমিনে ঘুরে দেখানো হয়েছে যাতে তারা রোহিঙ্গাদের বাস্তব পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বন্ধ হলে শিবিরগুলোতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এজন্য আমরা দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে অর্থায়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই।’
তিনি সতর্ক করে আরও বলেন, এই সংকট দীর্ঘায়িত হলে তা শুধু বাংলাদেশের ওপর নয়, আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কক্সবাজারে কর্মরত বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রোগ্রাম পলিসি অফিসার শেখ রবিউল আলম বলেন, ‘বিদ্যমান তহবিল দিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা চালানো সম্ভব। কিন্তু এখনো নতুন অর্থায়নের কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি, যা ইতোমধ্যেই শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন অর্থায়ন না এলে খাদ্য সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ মানবিক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।’
উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির উপস্থিতি পুরো কার্যক্রমকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করেছে। রাজনৈতিক নেতারা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট কোনো একক সরকারের সমস্যা নয়, এটি জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সংলাপে অংশ নেন। তাদের মতে, সব দলের সক্রিয় সম্পৃক্ততা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালী করবে।
বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের অসাধারণ ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক মানবিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেন। তারা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। আশা করা হচ্ছে, বৈশ্বিক কূটনীতির এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সংকট সমাধানে নতুন দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।
কক্সবাজারে আয়োজিত এ সংলাপে সরকার, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংগঠন, কূটনৈতিক মহল এবং রাজনৈতিক দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ কক্সবাজারকে রূপ দিয়েছে বৈশ্বিক মানবিক কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে ৩ দিনের সংলাপ সমাপ্ত হয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকটকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরতে গত রোববার (২৪ আগস্ট) থেকে শুরু হয়েছিল ‘স্টেকহোল্ডার্স’ ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়েজ টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এই সংলাপ।
/এএ
সূত্র : বাসস