Logo

জাতীয়

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১১:১৪

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্রে ঢাকা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দ্রোহ, মানবতার প্রেম ও সাম্যবাদের চেতনায় দীপ্ত কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশজুড়ে কবির প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হচ্ছে। 

কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। শৈশব থেকেই কঠিন দারিদ্র্য মোকাবিলা করে তিনি বড় হন। মাত্র ২৩ বছর বয়সে কবি নজরুলের সাহিত্যকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে। তিনি চিরপ্রেমের কবি হিসেবে ও পরিচিত ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ-তূর্য’।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে আনা হয়। তাঁকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা এবং ধানমন্ডিতে একটি বাড়িতে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৪ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে নাগরিকত্ব দেয় এবং একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নজরুল ইনস্টিটিউট ‘মৃত্যুঞ্জয়ী নজরুল’ শীর্ষক আলোচনা, হামদ-নাত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। বাংলা একাডেমি কবির কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে নজরুলের সমাধিতে সকাল থেকেই পরিবার ও অনুরাগীরা ভিড় জমান। সেখানে আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

কাজী নজরুল ইসলামের নাতনী খিলখিল কাজী বলেন, ‘নজরুল কতটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছেন, তা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। কেবল মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করাই যথেষ্ট নয়।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘নজরুল রচনাবলী অনুবাদ ও প্রসারের কাজ নজরুল ইন্সটিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ দিয়ে করতে হবে। তারা এই দায়িত্বটি ব্যাপকভাবে নিতে পারে।’

ভাষাবিদ ও গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, “নজরুল বলেছেন, ‘অমর কবি হওয়ার জন্য আমি আসিনি। আমার কাজ যুগের প্রয়োজন মেটানো’। আজও আমরা তাঁকে মনে রাখি, তাঁর লেখা এবং জীবনজীবিকা আমাদের অনুপ্রাণিত করছে।"

শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনের অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল ইনস্টিটিউট, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, নজরুলসংগীত শিল্পী সংস্থা, বাংলা একাডেমি, নজরুল প্রমিলা পরিষদ ও অন্যান্য সংগঠন নজরুলের সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিল্পীরা ‘বাগিচায় বুলবুলি’, ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’সহ গান পরিবেশন করেন।

কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বিদ্রোহী কবি নন, তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশে আনা হয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ধানমন্ডিতে বসবাস করেছেন। বাংলা সাহিত্যে এবং সংগীতে তার অবদান অমলিন।

এমএইচএস 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর