Logo

জাতীয়

শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার চ্যালেঞ্জে এনসিটিবি

Icon

তরিকুল ইসলাম সুমন

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:১২

শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার চ্যালেঞ্জে এনসিটিবি

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর

তরিকুল ইসলাম সুমন প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপার জন্য ছাপাখানার মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করছে এনসিটিবি। দুই একদিনের মধ্যে বই ছাপার কাজ শুরু হবে। কিন্তু নতুন করে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির দরপত্র আহ্বান করায় মাধ্যমিকের বই ছাপা নিয়ে চাপে পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে মাধ্যমিকের নতুন বই পৌঁছানো নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এনসিটিবি। এনসিটিবি সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরীকে ফোন ও ম্যাসেস দিলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

অপরদিকে এনসিটিবির কর্মকর্তাদের গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত বছর ৪০টির মতো ছাপাখানা 'নিম্নমানের' পাঠ্যবই সরবরাহ করেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে বই সরবরাহও করতে পারেনি। কিন্তু নানা মহলের তদবিরের চাপে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। ওইসব প্রতিষ্ঠান এবারও কাজ পেতে তদবির করছে। তাছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপা শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সব বই স্কুলে পৌঁছাতে গত মার্চ মাস পর্যন্ত গড়ায়। এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের চার মাসেরও কম সময় আগে পুনঃদরপত্র আহ্বান করায় সেই ‘সংকট’ আরও প্রকট হতে চলেছে। 

তারা আশঙ্কা করছেন দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে বই ছাপার চুক্তি শেষ হতে প্রায় ৪০ দিনে লেগে যাবে। এ কারণে পরবর্তী ৭০ দিনের মধ্যে বই ছাপার কাজ শেষ হওয়া ও বিতরণে সমস্যা দেখা দেবে। বছরের শুরুতে এসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো নিয়েও চ্যালেঞ্জের মধ্যে এনসিটিবি।

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপানোর অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ (ক্রয় কমিটি)। এরপরেই বই ছাপার চুক্তি ও সিডি সরবরাহ শুরু হয়। তবে এনসিটিবির লক্ষ্য ছিল, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপানোর কাজ শেষ করা। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, প্রাথমিক স্তরে সংকট না থাকলেও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থী নতুন বছরের শুরুতে সব বই হাতে পাবে কি না, তা নিয়ে বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। 

এ বিষয়ে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি ও বৈষম্যবিরোধী মুদ্রণ ব্যবসায়ী নেতা তোফায়েল খান বলেন, নতুন করে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির দরপত্র আহ্বান হওয়ায় মাধ্যমিকের বই ছাপা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে। এবার যে টেন্ডার বাতিল হয়েছে, সেখানে অনিয়ম হয়েছে। একই আইডি ব্যবহার করে একাধিক টেন্ডার ড্রপ (দরপত্র জমা) হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে এটা হতেই পারে না। ৮-১০ জায়গা থেকে সব টেন্ডার ড্রপ হয়েছে। ইবতেদায়ী এবং নবম ও দশম শ্রেণির বই ছাপার দরপত্রেও একই অনিয়ম হয়েছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু কাজ অতিরিক্ত নিয়েছিল অভিজ্ঞতার অজুহাত দেখিয়ে। বড় প্যাকেজ দেখিয়ে অনেক ছোট প্রতিষ্ঠানকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এবার রিটেন্ডারে অভিজ্ঞতা হ্রাস করা হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা না থাকলে দরপত্র মূল্যায়ন দ্রুত হবে। তা না হলে বই ছাপাতে দেরি হবে। কিন্তু এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ফাইলবন্দি না করে কম সময়ে কার্যকর ভূমিকা শিক্ষা উপদেষ্টাকেই নিতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, নতুন করে দরপত্র আহ্বানে বই ছাপানোর কাজ আড়াই মাস পিছিয়ে যাবে। এতে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে মাধ্যমিকের বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। আবার কাগজের দামও বৃদ্ধির আশঙ্কা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাপাখানার। 

একাধিক ছাপাখানার মালিক জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচন কেন্দ্রিক পোস্টার ছাপা, রয়েছে নোট ও গাইড বই ছাপার চাপ। সব মিলিয়ে পাঠ্যবই ছাপার মান খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রমও বিলম্বিত হতে পারে।

জানা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৯০৬, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২ এবং অষ্টম শ্রেণির ৪ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮। মাধ্যমিকের মোট ২৮০টি লটের মধ্যে ১১ কোটি ৮৯ লাখ বই ছাপানোর দরপত্র বাতিল হয়েছে। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬০৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, পুনঃদরপত্রে মাধ্যমিকের এই তিন শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপাতে অন্তত পাঁচ মাস সময় লাগতে পারে। কারণ বিগত বছরে দেখা গেছে, এনসিটিবির পরিকল্পনা অনুযায়ী মুদ্রণ কাজ এগোয় না। বাজারে কাগজের ‘কৃত্রিম’ সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়া এবং বাঁধাইকর্মীর সংকট নানা সমস্যার কথা বলেন ছাপাখানা মালিকরা। 

আবার বছরের শেষ দিকে বিশেষ করে নভেম্বরে-ডিসেম্বরে ছাপাখানাগুলো নোট-গাইড বা সহায়ক বই ছাপানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এর আগে সারাদেশে পোস্টার ছাপাবে ছাপাখানা মালিকরা। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে পুনঃদরপত্র শেষে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার সময় বই ছাপানোর সময় কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের মোট পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে ৮ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে ইতোমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপা শুরু করতে ঠিকাদারদের (ছাপাখানা মালিক) ‘সিডি’ সরবরাহ করা হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের 'পাণ্ডুলিপি' প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ এই দুই শ্রেণির বইয়ের ‘সিডি’ কার্যাদেশ পাওয়া ছাপাখানাগুলোকে সরবরাহ করার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের 'সিডি' সরবরাহ কার্যক্রমও শেষ পর্যায়ে। অপরদিকে ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৯০৬, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২ এবং অষ্টম শ্রেণির ৪ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮ বই ছাপাতে হবে।

বিকেপি/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর