Logo

জাতীয়

আদালতের আদেশে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাওয়ার পথ কঠিন করছে ইসি

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:০৩

আদালতের আদেশে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাওয়ার পথ কঠিন করছে ইসি

রাজনৈতিক দল নিবন্ধন নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক এবার ভিন্ন মোড় নিচ্ছে। শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলেও আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নিবন্ধন পাওয়ার যে প্রবণতা গড়ে উঠেছিল, তা ঠেকাতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার থেকে কোনো দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণ না করলে কেবল আবেদন বাতিল নয়, বরং লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে কোন কারণে তারা অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, এত দিন পর্যন্ত আবেদন বাতিলের কোনো আনুষ্ঠানিক কারণপত্র দলগুলোকে দেওয়া হতো না। ফলে অনেকে সহজেই আদালতে গিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদেশ আদায় করত। আদালত নির্দেশনা দিলে ইসির আর কিছু করার থাকত না। এভাবেই শর্ত পূরণ না করলেও আদালতের আদেশে একাধিক দল নিবন্ধন পেয়েছে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে এই পথ রুদ্ধ হবে। কারণ লিখিতভাবে অযোগ্যতার কারণ জানিয়ে দেওয়া হলে আদালতে গিয়ে সেটি খণ্ডন করেই নিবন্ধন আদায় করতে হবে দলগুলোকে।

১৪৩ দলের আবেদন, টিকে আছে ২২
এবার এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধনের জন্য ১৪৩টি নতুন রাজনৈতিক দল আবেদন করেছিল। প্রথম ধাপে কোনো দলই পূর্ণ শর্ত পূরণ না করায় ইসি সবাইকে সময় দিয়েছিল ঘাটতি পূরণের জন্য। এর মধ্যে ৮৪টি দল অতিরিক্ত তথ্য দিলেও শেষ পর্যন্ত ৬২টি দল শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ মাত্র ২২টি দলের মাঠপর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা চলছে। এই তালিকা থেকেই নিবন্ধনের জন্য চূড়ান্ত দল বাছাই করা হবে।

অন্যদিকে ১২১টি দল নিবন্ধনের অযোগ্য হওয়ায় এরই মধ্যে তাদের চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন। এমনকি ২২টি দলের মধ্যে যদি কেউ নিবন্ধন না-ও পায়, সেক্ষেত্রেও কারণ উল্লেখ করে লিখিতভাবে জানানো হবে।

আদালতের রায়ে নিবন্ধন পাওয়া ১১ দল
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫১টি। তবে এর অন্তত ১১টি আদালতের রায়ের ভিত্তিতে নিবন্ধন পেয়েছে। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন সিংহ প্রতীকে, একই বছরের ৯ মে বাংলাদেশ কংগ্রেস ডাব প্রতীকে নিবন্ধন পায় আদালতের নির্দেশে। ২০২৩ সালে ইনসানিয়াত বিপ্লব, তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাসদ আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন আদায় করে।

সবচেয়ে বেশি দল নিবন্ধন পায় ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পরের সময়ে। এক বছরের মধ্যেই আদালতের আদেশে ছয়টি দল নিবন্ধন পায়। এর মধ্যে রয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণ অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি এবং বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি)।

নিবন্ধনের নিয়মকানুন
আইন অনুযায়ী, কোনো দল নিবন্ধন পেতে চাইলে তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি থাকতে হবে। প্রতিটি কমিটির সঙ্গে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণও জমা দিতে হয়। এ ছাড়া দলের প্রার্থী যদি আগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন, কিংবা আগের কোনো নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোট পান, তাহলেও নিবন্ধনের যোগ্যতা পূরণ হয়।

২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫টি দল নিবন্ধন পেলেও শর্ত পূরণ না করা, প্রতিপালনে ব্যর্থতা কিংবা আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এসব দলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সম্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াত ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি কেবল জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহাল করেছে।

দল নিবন্ধনের নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আগে নিবন্ধন না দেওয়ার কারণ লিখিতভাবে জানানো হতো না। এতে দলগুলো সহজেই আদালতের আশ্রয় নিয়ে নিবন্ধন আদায় করত। এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি— শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণ লিখিতভাবে জানিয়ে দেব। এতে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং মামলা ঠুকে নিবন্ধন পাওয়ার পথও কঠিন হবে।’ 

এসআইবি/এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

নির্বাচন কমিশন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর