ডিজিটাল জুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:২১
-68c6dd769d42f.jpg)
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
ফেনীর পরশুরামের সোহেল (ছদ্মনাম) প্রবাসে যাওয়ার জন্য অর্থ জোগাড় করতে অনলাইন বেটিং সাইটে খেলা শুরু করেছিলেন। প্রথমে কিছু টাকা জিতলেও পরে সব হারান। কয়েক মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হন। পরিবার ঋণের বোঝায় জর্জরিত, আর সোহেল কর্মহীন ও দিশেহারা।
রাজধানীর মিরপুরের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শাওন অনলাইনে মোবাইল গেমের মাধ্যমে প্রথমে ছোট অঙ্কের জুয়া খেলতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে হারানো টাকা লাখে পৌঁছায়। পড়াশোনার খরচ ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে টাকা ধার করে খেলার ফলে ঋণের বোঝা সামলাতে না পেরে ২৩ বছর বয়সী শাওন শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
একই ধরনের ঘটনা রংপুর, রাজবাড়ী, কুমিল্লা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘটেছে।
বাংলাদেশের সাইবার স্পেস একদিকে যেমন তথ্য আদান-প্রদানের বিস্তৃত ক্ষেত্র, অন্যদিকে অপরাধীদের জন্য ‘স্বর্ণখনি’ হিসেবে কাজ করছে। অনলাইন জুয়া, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিদিন অগণিত তরুণ-তরুণী নিঃস্ব হচ্ছেন। কেউ কেউ হতাশায় আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন। তবুও থামানো যাচ্ছে না এ চক্রকে। তবে এবার বেপরোয়া এই চক্রের লাগাম টানতে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি জারি হওয়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এ অনলাইন জুয়া, প্রতারণা ও জালিয়াতিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী অনলাইনে জুয়া খেলা, এর জন্য অ্যাপ বা ওয়েবসাইট তৈরি, পরিচালনা কিংবা খেলায় অংশগ্রহণ বা উৎসাহ প্রদান করলেও তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একইভাবে, জালিয়াতির ক্ষেত্রে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে দুই বছরের কারাদণ্ড বা বিশ লাখ টাকা জরিমানা। প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, পঞ্চাশ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারের অবস্থান ‘শূন্য সহনশীলতা’। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে নজরদারি বাড়িয়েছে এবং প্রযুক্তিনির্ভর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সাইবার অপরাধীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। অনেক অবৈধ ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এএইচএম শাহাদাত হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কেবল আইন প্রয়োগ করলেই হবে না, জনসচেতনতা সমানভাবে জরুরি। প্রতারণার কৌশল প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা সতর্ক না হলে আইন দিয়ে সবকিছু ঠেকানো সম্ভব নয়।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, অনলাইন প্রতারণা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বাড়তে থাকা ইন্টারনেট ব্যবহার বাংলাদেশকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তবে শক্তিশালী আইন, প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি এবং জনসচেতনতার সমন্বয় ঘটাতে পারলেই এ বিপদ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
এমএইচএস