-68c6e60e62fa0.jpg)
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া জুলাই সনদ এখন বাস্তবায়নের ধাপে পৌঁছেছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও কোনো পূর্ণ ঐক্যমত গড়ে ওঠেনি।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, স্বৈরাচার যেন আর ফিরে না আসে, এজন্য সকলকে দ্রুত ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই।
বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অংশ নেন। যদিও দলগুলো সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে একমত, বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি ও পদ্ধতি নিয়ে বিভাজন রয়েছে।
বিএনপি সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে যাতে সনদ সম্পূর্ণ আইনের আওতায় আসে। বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সনদে স্বাক্ষর দিতে আমরা প্রস্তুত। তবে কিছু সাংবিধানিক পর্যবেক্ষণ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিলে বাস্তবায়ন সহজ হবে।’
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী সংবিধান আদেশ ২০২৫ জারির পক্ষে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আমরা চাই সনদ এমন একটি আইনি কাঠামোয় আসুক, যা ভবিষ্যতে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। সংবিধান আদেশ জারি হলে আইনগত বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত হবে।’
এনসিপি একটি ভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। দলটি গণপরিষদের মাধ্যমে সাংবিধানিক সমাধান দেখতে চায়। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘৮৪টি পয়েন্টের মধ্যে ৪৩টি সরাসরি সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়নই সবচেয়ে কার্যকর। আমরা আশা হারাতে চাই না।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক চলছে। নোট অব ডিসেন্টসহ ৮৪টি বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে। রোববারের বৈঠকে দলগুলো কিছু নতুন প্রস্তাব দিয়েছে, তবে মূল দ্বন্দ্ব এখনও বিদ্যমান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে বলেন, ‘এই কমিশন সারাবিশ্বে নজির হয়ে থাকবে। যদি সবাই ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারি, তাহলে আগামী নির্বাচন হবে মহাউৎসবের। নবজন্ম হবে। সকলকে একমত হতে হবে।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এই সময়সীমার মধ্যে প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে সম্মতি দেওয়ার জন্যও তাগিদ দিয়েছেন।
- বিএনপি সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার পক্ষে
- জামায়াতে ইসলামী সংবিধান আদেশ জারির পক্ষে
- এনসিপি গণপরিষদের মাধ্যমে আইনি সমাধান চায়
- কমিশনের বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত হয়নি
- ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা
বিশ্লেষকরা মনে করেন, জুলাই সনদে ঐক্য না হলে এর বাস্তবায়ন ধীরগতিতে চলতে পারে। তবু প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস অনুযায়ী, নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইনি স্বচ্ছতা এবং সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলে তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সফল বাস্তবায়ন ভবিষ্যতে স্বৈরাচারের যেকোনো চেষ্টা ব্যর্থ করতে সহায়ক হবে।
রোববারের বৈঠক মূলত নির্বাচনী সংস্কার ও সনদ বাস্তবায়নের কাঠামো নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। আগামী মাসগুলোতে রাজনৈতিক দলের আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা সকল পক্ষকে সতর্ক করেছেন, দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। স্বৈরাচার ফেরার কোনো পথ রাখা যাবে না।
এনএমএম/এমএইচএস