
ছবি : সংগৃহীত
- কমছে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনমানের নিশ্চয়তা
- সরকারি শিক্ষকরা স্থিতিশীল থাকলেও বেসরকারি শিক্ষকরা দুর্দশায়
- দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত
আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি— শিক্ষকদের সম্মান জানানো, তাঁদের অবদান স্মরণ করা এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে তাঁদের ভূমিকা মূল্যায়নের দিন হিসেবে। তবে বাস্তবতা হলো, দেশের অধিকাংশ শিক্ষকের জীবনযাত্রা এবং আর্থিক নিরাপত্তা এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি’। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই প্রতিপাদ্য যেন এক অদ্ভুত বৈপরীত্য সৃষ্টি করছে। দেশের শিক্ষকরা সমাজে নৈতিক দিকনির্দেশক হলেও তাদের জীবন ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা যথাযথভাবে নিশ্চিত নয়।
সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষক কর্মরত বেসরকারি খাতে। এখানে বেতন, পদোন্নতি ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রায় অনুপস্থিত। বহু শিক্ষক মাসে মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকার বেতনে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস নিই, কিন্তু মাস শেষে হাতে আসে সামান্য বেতন। বাড়িভাড়া, বাজার খরচ, সন্তানের পড়ালেখা— সব মিলিয়ে টানাপোড়েন লেগেই থাকে।’
করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষক পেশা ছেড়ে অন্য কাজে ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছেন। এখনও সেই পুরোনো অবস্থায় ফিরে আসতে পারছেন না।
একসময় শিক্ষক মানেই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি— এই ধারণা এখন অনেকটাই ম্লান। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক-পরিচালকদের প্রভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, অনিশ্চিত চাকরি— এসব কারণে শিক্ষকতা এখন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার বদলে বেঁচে থাকার সংগ্রাম হয়ে উঠেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিরা ইসলাম বলেন, ‘আমরা জাতি গঠনের কারিগর, কিন্তু বাস্তবে সেই কারিগরদের জীবনে সুখ বা নিরাপত্তা নেই। সমাজে মুখে সম্মান থাকলেও বাস্তবে তা পাওয়া যায় না।’
সরকার শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষক কল্যাণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে— বেতন কাঠামো উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, ডিজিটাল ক্লাসরুম ইত্যাদি। তবে বাস্তবায়নের গতি ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ও ভাতা প্রদানে এখনও জটিলতা রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘শিক্ষকদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত না করে কোনো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা টেকসই করা সম্ভব নয়। দেশে এখনও শিক্ষক নিয়োগ থেকে পদোন্নতি— সবকিছুতেই জটিলতা ও বৈষম্য রয়েছে। শিক্ষককে যদি শুধু ক্লাস নেওয়ার যন্ত্র হিসেবে দেখা হয়, শিক্ষার্থীরা চিন্তাশীল নাগরিক হয়ে উঠবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকরা শুধু বেতন নয়, স্বীকৃতি চান। সমাজে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং জীবনমানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সরকার ও সমাজ উভয়ের দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষকদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠায়।’
এসআইবি/এমএইচএস