মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতায় রদবদলের পরামর্শ ইসির সাবেক কর্মকর্তাদের

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:১৪

ছবি : বাংলাদেশের খবর
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে আনার সুপারিশ করেছেন ইসির সাবেক কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা যেন দলীয় প্রভাবে কাজ না করেন, সেজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় রদবদল আনতে ইসিকে প্রস্তাব দিতে হবে।’
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় এই মতামত দেন তারা।
সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনসহ চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. জাকারিয়া বলেন, ‘ইসির কর্মকর্তা মাত্র আড়াই হাজার, অথচ নির্বাচনে প্রয়োজন প্রায় ১০ লাখ লোক। তাই ভোট-গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকসহ দলীয় প্রভাব আছে এমন প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগ না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একইসঙ্গে, পূর্ববর্তী তিন নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা বিতর্কিত কর্মকর্তাদের এড়ানোর তাগিদ দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের দৃশ্যমান নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে প্রয়োজনীয় বদলি আনতে হবে। পাশাপাশি, বৈধ-অবৈধ অস্ত্র, কালোটাকা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।’
সাবেক যুগ্মসচিব খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এবার নির্বাচন কমিশনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের উদ্যোগ যুগান্তকারী বলে মন্তব্য করেন তিনি। তফসিলের সময় বাড়ানো ও এক জেলায় একাধিক রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের পরামর্শ দেন।’
সাবেক উপসচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ সতর্ক করে বলেন, ‘পোস্টাল ব্যালটের ভোট নিয়েই বিতর্ক হতে পারে। তাই নিয়োগে সতর্কতা ও ভোটের সময় শৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়ার আহ্বান জানান। গণমাধ্যমকর্মীদের ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।’
অন্যান্য সাবেক কর্মকর্তারা বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার একমাস আগে থেকেই আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে স্থানীয় পর্যায়ে “ভোট পাহারা কমিটি” গঠন ও ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের বেশি দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেন তারা।’
সভা শেষে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা যাতে দলদাসের মতো আচরণ না করেন, তা নিশ্চিত করা হবে। অন্তরের মনোভাব জানা না গেলেও, কাজে যেন দলীয় প্রভাব না পড়ে সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট থাকব।’
তিনি জানান, ভোটের দায়িত্বে ব্যাংক কর্মকর্তাদের নেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে, তবে অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গেল তিন নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বাদ দিতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড় অবস্থায় পড়েছি। ১০ লাখ লোকের মধ্যে সবাইকে বাদ দিলে নির্বাচন করা কঠিন।’
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘অনেকেই আছেন যারা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করবেন। জাতীয় নির্বাচন মানেই জাতীয় দায়িত্ব, সবাইকে সেই চেতনা নিয়েই এগোতে হবে।’
এসআইবি/এএ