বিশ্ব ডাক দিবস আজ : আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জে ধুঁকছে ডাক সেবা

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৩

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
আজ ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে রাজধানীর আগারগাঁও ডাক ভবনে দু’দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য— ‘জনগণের জন্য ডাক : স্থানীয় পরিষেবা, বৈশ্বিক পরিসর’।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে ডাক ভবনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খান, আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরীসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল ৮টায় শোভাযাত্রা, সকাল ১০টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, বিকেলে ‘আগামীর ভাবনায় ডাক’ শীর্ষক সেমিনার। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণ করা হবে। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এছাড়া দিবস উপলক্ষে বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে বলেছেন, ডাকঘরকে কেবল বার্তা আদান-প্রদানের সীমাবদ্ধতায় না রেখে স্থানীয় অর্থনীতির ওয়ান স্টপ সেন্টারে রূপান্তর করা হবে। ডাক সেবার মাধ্যমে ই-কমার্স, ডিজিটাল আর্থিক সেবা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও কৃষকদের সহায়তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনার কথাও তিনি তুলে ধরেন।
তবে দেশে ডাকসেবার বর্তমান চিত্র আশাব্যঞ্জক নয়। ডাক বিভাগের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চার কোটি ৫৪ লাখ চিঠি ও পার্সেল প্রেরিত হলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে দুই কোটির নিচে। মোবাইল মানি অর্ডারও অর্ধেকে নেমে গেছে। আন্তর্জাতিক দ্রুত ডাক (ইএমএস) সেবা গত পাঁচ বছরে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভারতেরও পেছনে অবস্থান করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ডাক বিভাগের আধুনিকায়ন প্রকল্পগুলো কার্যত ভেস্তে গেছে। পোস্ট ই-সেন্টার ও মেইল প্রসেসিং সেন্টারের মতো বড় প্রকল্পে হাজার কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনা হলেও সেগুলোর বেশিরভাগই অব্যবহৃত পড়ে আছে। ফলে গ্রাহক আস্থা হারিয়ে মানুষ ঝুঁকছে বেসরকারি কুরিয়ার সেবার দিকে।
অন্তর্বর্তী সরকার ডাকসেবা আধুনিকীকরণে উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তার দাবি, ডাকের ঠিকানা ডিজিটাল ফরম্যাটে আনা হচ্ছে এবং প্রতিটি ঠিকানার সঙ্গে জিও লোকেশন যুক্ত করা হবে।
বিশ্ব ডাক দিবসের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ডাক বিভাগ নতুন সম্ভাবনার কথা জানালেও চিঠি-পার্সেলের ব্যবহার হ্রাস, মানি অর্ডারের জনপ্রিয়তা কমা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্পের কারণে ডাকসেবা এখনো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
এমএইচএস