কন্যা শিশু দিবস ২০২৫
বাল্যবিবাহ রোধে সরকারের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২১:১৫

বাংলাদেশে এখনও প্রতি দুই মেয়ের একজন বাল্যবিবাহের শিকার। এই ভয়াবহ বাস্তবতা থেকে মুক্তি পেতে বাল্যবিবাহ রোধে সরকারের প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে।
রোববার (১২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় সংলাপে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘এখন সময় এসেছে কথার চেয়ে কাজের মাধ্যমে বাল্যবিবাহের অবসান ঘটানোর।’
সংলাপের নেতৃত্ব দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। সহায়তা প্রদান করে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)। এতে অংশ নেন শিক্ষা, আইন ও বিচার, সমাজকল্যাণ, তথ্য ও সম্প্রচার, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা আইনি, সামাজিক, শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক সমন্বয়ের মাধ্যমে বাল্যবিবাহবিরোধী জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, “একটি মেয়ের আইনি সুরক্ষা, জীবন দক্ষতা এবং শিক্ষা না থাকলে সে ঝুঁকিমুক্ত নয়। তাই আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে যেন প্রতিটি মেয়ের শৈশব সুরক্ষিত থাকে।”
প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করেছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বয়সের তথ্য জালিয়াতি রোধে বিবাহ নিবন্ধন ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করার প্রস্তাব করেছে এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন সংশোধনের সুপারিশ দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুলে মেয়েদের টিকিয়ে রাখার জন্য জীবন দক্ষতা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা পাঠক্রম সংযোজনের এবং স্কুলগুলোকে নিরাপদ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অধিকারভিত্তিক স্বাস্থ্য প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছে। জেলা পর্যায়ে জাতীয় নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য জেলা কর্মপরিকল্পনা ও নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা চালুর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সংলাপের আগে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও টঘঋচঅ আয়োজন করেছে ফটো প্রদর্শনী ‘সম্ভাবনার ফ্রেম’, যা বাল্যবিবাহবিরোধী আন্দোলনের মানবিক চিত্র তুলে ধরে। প্রদর্শনীতে মেয়েদের সহনশীলতা, আশা ও সামাজিক রীতির বিরুদ্ধে লড়াই ফুটে উঠেছে।
সংলাপ শেষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বেগম মমতাজ আহমেদ বলেন, ‘সরকার বহুমাত্রিক ও সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ বন্ধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের মেয়েরা নিরাপদ, শিক্ষিত ও আত্মনির্ভর হবে।’
UNFPA ও মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কর্মসূচির অগ্রগতি তদারক করবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে।
এনএমএম/এমএইচএস