Logo

জাতীয়

তিন দশক পর গণভোট, সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ইসি

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩২

তিন দশক পর গণভোট, সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ইসি

বাংলাদেশে সর্বশেষ গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯১ সালে। আজ থেকে ৩৪ বছর আগে। দীর্ঘ সময় পর আবারও গণভোট আয়োজনের আলোচনা শুরু হয়েছে, এবার ‘জুলাই জাতীয় সনদ’কে আইনিভিত্তি দিতে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে ইতিমধ্যে তৎপরতা দেখা দিয়েছে। বিএনপি চায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হোক। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আগামী নভেম্বরে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) এখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত এলে গণভোট আয়োজনের ক্ষেত্রেও প্রস্তুত রয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সরকারের সিদ্ধান্তই হবে মূল চালিকা শক্তি।

আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬৩ লাখের বেশি। প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে আড়াই লক্ষাধিক ভোটকক্ষে ব্যালট পড়বে। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এ নির্বাচনে ১০ লাখের বেশি জনবল নিয়োজিত থাকবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন জানিয়েছে, ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

গণভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘গণভোট নির্ভর করছে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। সরকার যদি মনে করে গণভোট করবে, তাহলে আমরা অবশ্যই আয়োজন করব।’

তিনি মনে করেন, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে ব্যয় সাশ্রয় হবে। ‘একই দিনে দুই ভোট হলে শত শত কোটি টাকা বাঁচবে। দুই আলাদা দিনে আয়োজন করা খুবই ব্যয়বহুল।’

একইসঙ্গে ভোট আয়োজনের বাস্তবতা নিয়েও আশাবাদী কমিশনার মাছউদ। তার ভাষায়, একই ভোটকেন্দ্রে দুটি ব্যালট পেপার দেওয়া যেতে পারে। একটি সংসদ নির্বাচনের, আরেকটি গণভোটের। জনগণ একদিনেই দুটি ভোট দিতে পারবে। একটি প্রার্থীকে, আরেকটি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-তে।

আইনগত দিক নিয়েও তিনি আশ্বস্ত। ‘জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। যদি সরকারের সিদ্ধান্ত হয়, আমরা আইনি কাঠামোর মধ্যেই গণভোট বাস্তবায়ন করব,’ বলেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনবার গণভোট হয়েছে- ১৯৭৭, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালে।

• ১৯৭৭ সালের ৩০ মে প্রথম গণভোটে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার নীতি ও কর্মপন্থার প্রতি জনগণের সমর্থন চান। ভোটের ফল : ৯৮.৮৭ শতাংশ ‘হ্যাঁ’।

• ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ দ্বিতীয় গণভোটে রাষ্ট্রপতি এরশাদের শাসন ও পদে থাকার অনুমোদন চাওয়া হয়। ফলাফল : ৯৪.৫ শতাংশ ‘হ্যাঁ’।

• ১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তৃতীয় গণভোটে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা চালুর প্রশ্নে জনগণের মত নেওয়া হয়। ফলাফল : ৮৪ শতাংশ ‘হ্যাঁ’।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও সংসদবিষয়ক গবেষক নিজাম উদ্দিন আহমদ মনে করেন, এখন গণভোট আয়োজনের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো তা সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একত্রে করা।

‘এটি সংবিধান সংশোধন নয়, বরং জনগণের কাছে প্রস্তাবনা উপস্থাপন,’ বলেন অধ্যাপক নিজাম। ‘জনগণ যদি অনুমোদন দেয়, পরবর্তী সংসদে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সংশোধন আনা যাবে। রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারও এতে ব্যাহত হয় না।’

তিনি জানান, ২০১১ সালে গণভোটের বিধান বাতিল হলেও সাম্প্রতিক হাইকোর্টের রায়ে তা পুনর্বহাল হয়েছে। ফলে সরকার চাইলে গণভোটের পথে এগোতে পারে। ‘আইনগত কোনো বাধা নেই, শুধু আরপিও সংশোধন করে কমিশনকে দায়িত্ব দিলেই সম্ভব।’

অধ্যাপক নিজাম বলেন, ‘১৯৯১ সালের গণভোট আইন ও বিধি সামান্য পরিবর্তন করলেই চলবে। পৃথিবীর বহু দেশে সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট একসঙ্গে হয়। তাতে ভোটার বিভ্রান্ত হন না। বাংলাদেশেও সেটা বাস্তবসম্মত।’

গণভোট আয়োজনের বিষয়টি এখন মূলত সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। ইসি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তুতি না নিলেও প্রশাসনিকভাবে সবকিছু প্রস্তুত রাখছে।

নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি আমরা পূর্ণ গতিতে নিচ্ছি। সরকারের নির্দেশনা এলেই গণভোট আয়োজনও সম্ভব।’

দীর্ঘ তিন দশক পর আবারও গণভোট আয়োজনের আলোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তাপ তৈরি করেছে। জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে দেশের গণভোটের চতুর্থ অধ্যায়—এখন অপেক্ষা শুধু সরকারের সিদ্ধান্তের।

এসআইবি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর