Logo

জাতীয়

এআই অপব্যবহার রোধে ইসির মহাপরিকল্পনা, আছে চ্যালেঞ্জ

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:১১

এআই অপব্যবহার রোধে ইসির মহাপরিকল্পনা, আছে চ্যালেঞ্জ

ছবি : সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বড় ধরনের প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। মূল লক্ষ্য—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য ছড়িয়ে পড়া রোধ করা। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য, ডিপফেক ভিডিও, বিকৃত বক্তব্য ও ছবির মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার প্রবণতা বাড়ছে। ইসি মনে করছে, নির্বাচনের সময় এই প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অপতথ্য ও গুজব মোকাবিলায় একটি কেন্দ্রীয় “সেন্ট্রাল সেল” গঠন করা হবে, যা সারাদেশে তথ্য পর্যবেক্ষণ, যাচাই ও প্রতিক্রিয়া প্রদানের কাজ করবে। শুধু তা-ই নয়, এই সেল ২৪ ঘণ্টা সচল থাকবে এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে কাজ করবে।

এআই মোকাবিলায় নতুন উদ্যোগ

সম্প্রতি আগারগাঁওয়ে ইসির সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টিগ্রেশন অব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন আপকামিং ন্যাশনাল পার্লামেন্ট ইলেকশন টু কাউন্টার মিসইনফরমেশন অ্যান্ড ডিজইনফরমেশন’ শীর্ষক সেমিনারে এই পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন এনটিএমসি, বিটিআরসি, এমআইএসটি, সিআইডি, আইসিটি বিভাগ, আইএফইএস, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেসিসসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এআই-এর অপব্যবহার এখন বৈশ্বিক মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এর অপব্যবহার রোধে সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নিতে চাই। মিসইনফরমেশন ও ডিজইনফরমেশন মোকাবিলায় একটি কেন্দ্রীয় সেল গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অপতথ্য ও গুজব রোধে ২৪ ঘণ্টা সচল ফ্যাক্ট-চেকিং মেকানিজম তৈরি করতে চাই আমরা। এটি দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার কাজ—কতজন জনবল লাগবে, কার কী দায়িত্ব হবে, ফ্যাক্ট-চেকিং কীভাবে কাজ করবে—এসব বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা দরকার। আমরা শুধু গাইডলাইন নয়, কার্যকর বাস্তবায়নযোগ্য উদ্যোগ চাই।’

সিইসি জানান, ‘শহর থেকে দুর্গম এলাকায় তথ্যের প্রবাহ নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সব সংস্থার মধ্যে সমন্বিত ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।’

কেন প্রয়োজন এই সেল

নির্বাচনের সময় বিভিন্ন পক্ষ বা গোষ্ঠী এআই-ভিত্তিক টুল ব্যবহার করে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য প্রচার, ডিপফেক ভিডিও তৈরি বা জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে—এমন আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকের মতো সামাজিক মাধ্যমে এই ধরনের কনটেন্ট মুহূর্তেই লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘যদি কোনো প্রার্থী বা দলকে নিয়ে বিকৃত ছবি, ভুয়া অডিও বা ভিডিও ছড়ানো হয়, সেটি ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। সেই কারণে আগে থেকেই একটি প্রযুক্তিনির্ভর মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।’

নির্বাচনে ইসির এআই অপব্যবহার রোধের পরিকল্পনা নিয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন প্রায় সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। কেউ ইচ্ছা করলেই এআই ব্যবহার করে ভুয়া ছবি বা ভিডিও বানাতে পারে। নির্বাচনের সময় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো খুব সহজ হয়ে যাবে। তাই ইসির এই উদ্যোগ সময়োপযোগী। তবে শুধু প্রযুক্তি নয়, এর সঙ্গে মানবসম্পদ, প্রশিক্ষণ ও জনগণের অংশগ্রহণও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসির উচিত প্রতিটি অঞ্চলে স্থানীয় তথ্য যাচাই টিম তৈরি করা, যারা দ্রুত কোনো গুজব শনাক্ত করে কেন্দ্রীয় সেলে পাঠাবে। একই সঙ্গে ফেসবুক, গুগল বা এক্স (টুইটার)-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’

বড় চ্যালেঞ্জগুলো কোথায়

নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, সেন্ট্রাল সেল গঠন যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বড় বিষয় এটি চালু রাখার সক্ষমতা নিশ্চিত করা। দেশে এখনো পর্যাপ্ত ইন্টারনেট অবকাঠামো, প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিকর্মী এবং রিয়েল-টাইম মনিটরিং সিস্টেমের অভাব রয়েছে।

ইসির তথ্য ও প্রযুক্তি শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা এমন একটি ব্যবস্থা চাই যেখানে অপতথ্য শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট টিম প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে তা করতে হলে মানবসম্পদ, আধুনিক সফটওয়্যার, তথ্য বিশ্লেষণ টুল ও সংস্থাগুলোর মধ্যে তাৎক্ষণিক সমন্বয় দরকার।’

আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো জনগণের তথ্য যাচাই-সংস্কৃতি তৈরি করা। বাংলাদেশের অধিকাংশ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী তথ্য যাচাই না করেই শেয়ার করেন, যা গুজব ছড়ানোর অন্যতম কারণ।

ইসি বলছে, ‘তাদের পরিকল্পনা শুধু গুজব প্রতিরোধে সীমিত নয়—বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি “ইন্টিগ্রেটেড ইনফরমেশন রেসপন্স সিস্টেম” তৈরি করা, যা ভবিষ্যতের সব নির্বাচনে কার্যকর হবে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে মাঠ-পর্যায়ের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ থাকবে।’

এআই অপব্যবহার রোধে পরিকল্পনার বিষয়ে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন শুধু ভোটের দিন নয়—এটা একটি প্রক্রিয়া। জনগণ যাতে সত্য ও সঠিক তথ্য পায়, সেটিই আমাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টা দরকার।’

এসআইবি/এএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সংসদ নির্বাচন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর