Logo

জাতীয়

জনপ্রশাসন সংস্কারে এগোচ্ছে সরকার

Icon

তরিকুল ইসলাম সুমন

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪২

জনপ্রশাসন সংস্কারে এগোচ্ছে সরকার

প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বর্তমানে এখানে রয়েছে ৪৩টি মন্ত্রণালয় এবং ২৫টি বিভাগ। অনেক মন্ত্রণালয়ের রয়েছে একাধিক বিভাগও। যেখানে আবার কাজ করেন একাধিক সচিব। তবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ছিল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংখ্যা কমিয়ে আনা। সরকার এক্ষেত্রে সুপারিশ বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা ও সেবার মান বৃদ্ধিতে মন্ত্রণালয়গুলোর বিভাগের সংখ্যা কমানোর কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি কমানো হচ্ছে শীর্ষ পদের সংখ্যা। এরই ধারাবাহিকতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগকে একীভূত করছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রি-এনআইসিএআর (জাতীয় প্রশাসনিক সংস্কার বাস্তবায়ন কমিটি) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা দুটি বিভাগকে একীভূত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার প্রধান কারণ হলো কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং জনসাধারণের জন্য চিকিৎসাসেবার নিশ্চয়তা বৃদ্ধি করা। এর পাশাপাশি, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পাঁচটি অধিদপ্তর ও দুটি প্রতিষ্ঠান ভেঙে তিনটি নতুন অধিদপ্তর গঠন করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর’, ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর’ এবং ‘চিকিৎসাসেবা তত্ত্বাবধান অধিদপ্তর’।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রস্তাবনায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংখ্যা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের যা বলার তা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। বাস্তবায়ন করা না করায় আমাদের কোনো হাত নেই।

জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর ‘রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬’-এর ক্ষমতাবলে মন্ত্রণালয়ের ‘জননিরাপত্তা বিভাগ’ ও ‘সুরক্ষা সেবা বিভাগ’কে একত্র করে ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’ নামে পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

২০১৭ সালের মার্চে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগে বিভক্ত করে। বিভিন্ন অধিদপ্তর পুনর্গঠন করে এই দুটি বিভাগের অধীনে আনা হয় এবং প্রতিটি বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন সচিবকে।

প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, মন্ত্রণালয়কে বিভক্ত করা এবং মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করা কোনোটাই জনগণের সেবার জন্য করা হয়নি। ভাগ করা হয়েছিল কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনে। এখন যেটি হচ্ছে সেটিও করা হচ্ছে কারো না কারো ক্ষমতা বাড়াতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসনের কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তার ইচ্ছা ও তাদের স্বার্থেই এটি করা হচ্ছে। যেখানে জনগণের সেবার চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসনের কর্মপরিধি বাড়ছে, নতুন নতুন বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও পদ সৃজন করা হচ্ছে। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে বিভাগগুলোর সচিবের সংখ্যা কমবে।

 

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে দেশে মোট আটটি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে। ভৌগোলিক ও যাতায়াতের সুবিধা বিবেচনায় কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগ গঠনের অনেক দিনের দাবি অনুযায়ী দুইটি নতুন বিভাগ গঠন করার সুপারিশ করা হলো। কমিশনের সুপারিশ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে মোট ৪৩টি মন্ত্রণালয় ও ৬১টি বিভাগ আছে।

মন্ত্রণালয়গুলোকে যুক্তিসঙ্গতভাবে কমিয়ে সংস্কার কমিশন সরকারের সব মন্ত্রণালয়কে মোট ২৫টি মন্ত্রণালয় ও ৪০টি বিভাগে পুনর্বিন্যাস করার সুপারিশ করছে। মন্ত্রণালয়গুলোকে পাঁচটি গুচ্ছে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। যেমন, বিধিবদ্ধ প্রশাসন; অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য; ভৌত অবকাঠামো ও যোগাযোগ; কৃষি ও পরিবেশ এবং মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন। মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে সচিবালয়ের উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলো নিয়ে একটি ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছিল, পেনশন সুবিধাসহ স্বেচ্ছায় অবসর নিতে ২৫ বছরের চাকরি ক্ষেত্রে ১৫ বছর করার সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে। বাধ্যতামূলক অবসর গ্রহণের ক্ষেত্রে পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্ট, ২০১৮-এর ধারা ৪৫ বিধান অনুসারে ২৫ বছর চাকরির পরে সরকার ইচ্ছা করলে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসর দিতে পারবে বলে যে বিধান রয়েছে, তা বাতিল করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। 

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সচিবালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর