ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত সোমবার নতুন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এতে আগের বেশ কিছু বিধান পরিবর্তনের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে একগুচ্ছ নতুন বিধান। সংশোধিত এই আরপিওকে ভিত্তি করেই দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি শিগগিরই চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
অধ্যাদেশে প্রায় দেড় দশক পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীকে পুনর্ভুক্ত করা হয়েছে; যুক্ত হয়েছে ‘না’ ভোটের বিধান, পলাতক আসামির প্রার্থী হওয়া নিষিদ্ধকরণ এবং আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থার মতো নতুন ধারাও। একাধিক রাজনৈতিক দল জোট গঠন করলেও এবার থেকে প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে- এ বিধান নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। সংশোধিত আরপিওতে আরও রয়েছে জামানতের পরিমাণ বৃদ্ধি, আচরণবিধি লঙ্ঘনে কঠোর শাস্তির বিধান, এআইয়ের অপব্যবহারকে নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং ইসির ফল বাতিলের ক্ষমতা সম্প্রসারণ।
তবে এসব পরিবর্তনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে জোটভুক্ত দলের প্রতীক ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দলের আপত্তি ও আলোচনার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সংশোধন কেবল নির্বাচন প্রক্রিয়াই নয়, বরং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
নতুন কী থাকছে: সংশোধিত আরপিওতে আদালত ঘোষিত ফেরারি বা পলাতক আসামির প্রার্থী হওয়া ও ভোট করায় নিষেধাজ্ঞা যুক্ত হয়েছে। একক প্রার্থী থাকলে ব্যালটে ‘না’ ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
একাধিক রাজনৈতিক দল জোট করলেও প্রার্থীকে নিজের দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে- এ বিধানও এবার যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া সমসংখ্যক ভোট পেলে লটারির বদলে পুনঃভোটের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ, দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা, আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা, অনিয়মের কারণে পুরো আসনের ভোট বাতিলের বিধান, এআইয়ের অপব্যবহারকে নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং হলফনামায় অসত্য তথ্য (ভোটে অযোগ্য এমন) দিলে নির্বাচিত হওয়ার পরও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে আরপিওতে বলা হয়েছে।
প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা, হলফনামা ও জামানত: ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি আদালত কর্তৃক ফেরারি/পলাতক ঘোষিত হলে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির মতো লাভজনক পদের দায়িত্বে থাকলেও প্রার্থী হওয়া যাবে না।
হলফনামায় দেশে-বিদেশে আয়ের উৎস উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং অসত্য তথ্য দিলে ভোটের পরও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে। মনোনয়নপত্রের জামানত বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে, যা আগে ছিল ২০ হাজার।
ভোটগ্রহণ ও প্রশাসনিক ক্ষমতা: ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতের ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে। ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে ভোট বিঘিœত হলে বা ব্যালট বাক্স ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রিজাইডিং অফিসার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাবেন এবং ইসি নতুন তারিখ ঘোষণা করবে। ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদের ইভিএম সংক্রান্ত বিধান বাতিল করা হয়েছে।
প্রবাসী, কর্মস্থল-বহির্ভূত সরকারি চাকরিজীবী এবং কারাবন্দিদের জন্য আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং যুক্ত করা হয়েছে।
গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষণ: ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের বিধান স্পষ্ট করা হয়েছে।
৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদে ভোট গণনার সময়ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতির সুযোগ রাখা হয়েছে। গণনা শেষে ফল ঘোষণার আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করলে বাতিল ব্যালট পুনরায় পরীক্ষা করতে পারবেন।
ব্যয়, অনিয়ম ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা: নির্বাচনি ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল উভয়কে যুক্ত করা হয়েছে। ভোটারপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় ১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মোট ব্যয় ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুদানের উৎস বিস্তারিতভাবে অনলাইনে প্রকাশ বাধ্যতামূলক।
৭৩ নম্বর অনুচ্ছেদে মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, গুজব ও এআইয়ের অপব্যবহার নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। ৯১ নম্বর অনুচ্ছেদ ইসিকে ক্ষমতা দিয়েছে কেন্দ্রের ভোট বাতিলের পাশাপাশি প্রয়োজনে পুরো আসনের ফল বাতিল করার। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে; দলের ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান যুক্ত হয়েছে।
অন্যান্য পরিবর্তন: ডিআইজি পদ পর্যন্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলির তথ্য ইসিকে জানাতে হবে। দল নিবন্ধন, অনুদান ও নিবন্ধন স্থগিত হলে প্রতীক স্থগিতের বিধান যুক্ত হয়েছে। কয়েকটি অনুচ্ছেদে (৭৪, ৮১, ৮৭, ৮৯) ছোটখাটো সংশোধন আনা হয়েছে।
ইসির কর্মকর্তাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের সময় গণভোটের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য হলে কমিশনের কর্মপরিকল্পনাতেও পরিবর্তন আসতে পারে।
সংশোধিত আরপিও জারির মধ্য দিয়ে নির্বাচনি আইন সংস্কারের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি।
২ নম্বর অনুচ্ছেদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোটে এমন বিধান ছিল। গত তিন নির্বাচনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় ছিল সশস্ত্র বাহিনী। এবার সংশোধন হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও দৃশ্যমান হতে পারে।
৯ নম্বর অনুচ্ছেদ পরিমার্জন করা হয়েছে; রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলে তা ইসিকে অবহিত করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে থাকলেও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।
কোনো প্রতিষ্ঠানের কাযনির্বাহী পদকে ‘লাভজনক’ পদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে আরপিওতে। ফলে প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পদে থেকে ভোটে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে না।
হলফনামায় দেশে এবং বিদেশে আয়ের উৎস থাকলে তা জানাতে হবে; দাখিল করতে হবে সবশেষ বছরের রিটার্ন।
প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য সংক্রান্ত হলনামায় অসত্য তথ্যের প্রমাণ পেলে ভোটের পরেও ইসির ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে।
১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া জামানতের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে এর পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টাকা।
১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশে ক্ষুব্ধ হলে প্রার্থী বা ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোনো সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানও আপিল করার সুযোগ পাবে।
১৯ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কোনো আসনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী যদি একজন থাকে, তাহলে ব্যালট পেপারে ‘না’ ভোটের বিধান থাকবে। তবে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও শেষ পর্যন্ত একক প্রার্থী থাকলে তাকে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।
২০ নম্বর সংশোধিত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত একাধিক রাজনৈতিক দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীক বা মার্কায় ভোট করতে হবে।
২১ নম্বর অনুচ্ছেদ পরিমার্জন করে বলা হয়েছে- নির্বাচনি এজেন্টকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ভোটার হতে হবে।
২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। প্রবাসী, নির্বাচনি এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী এবং কারাগারে বা হেফাজতে থাকা ব্যক্তি পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, গণনার ফল যোগ করার আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা ‘প্রয়োজন মনে করলে’ প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে বাতিল হওয়া ভোট পরীক্ষা করতে পারবেন। তিনি যদি এমন ব্যালট পান- যা বাদ দেওয়া ঠিক হয়নি, সেটি সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর ভোট হিসাবে গণ্য হবে।
৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সমভোট পেলে লটারির পরিবর্তে পুনঃভোট করা যাবে। আগে সমভোট প্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে লটারি করে একজনকে নির্বাচিত করার বিধান ছিল।
উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক বা ডিআইজি পদমর্যাদা পর্যন্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলির তথ্য ইসিকে জানাতে হবে। দল নিবন্ধন ও আর্থিক অনুদানের বিষয় এবং নিবন্ধন স্থগিত হলে প্রতীক স্থগিতের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে ৯০ নম্বর অনুচ্ছেদে।
জাতীয় নির্বাচনের সময় গণভোট প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য ও সরকারি সিদ্ধান্ত এলে ইসির কর্ম-পরিকল্পনায়ও পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমের পাশাপাশি ইসির ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও ব্যবস্থা নিতে পারবেন- এমন বিধান রাখা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে হলফনামায় অসত্য তথ্যে যাচাই ও ভোটের পরেও ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ইসিকে। আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারির মধ্যে নির্বাচনি আইনের সব ধরনের সংস্কার কাজ শেষ হলো। ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান আইন সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষণ নীতিমালা, সাংবাদিক নীতিমালাসহ সব ধরনের আইন-বিধি সংস্কার করেছে ইসি।
আরপিও সংশোধন হওয়ায় এর আলোকে দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা শিগগির জারি করবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থা ইসি।
এর আগে ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বড় পরিবর্তন এনে আরপিও সংশোধনে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল উপদেষ্টা পরিষদ। এতে জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের মার্কায় ভোট করতেন। সেই সুযোগ বন্ধ করা হয় আরপিও (২০ ধারা) সংশোধনের মাধ্যমে। সরকার গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আমলেও এই সুযোগ বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে পাঠানো প্রস্তাবে এই সুপারিশ অপরিবর্তিত রাখা হয়।
কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের পর গেজেট প্রকাশের আগেই সংশোধনী বাতিল ও আগের বিধান বহাল রাখার দাবি জানিয়ে গত ২৯ অক্টোবর আইন উপদেষ্টাকে চিঠি দেয় বিএনপি। একই দাবিতে ২৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনকেও চিঠি দেয় তারা। জোটবদ্ধ দলগুলোর ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছামতো জোটের প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ চায় দলটি।
বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রাতেই উপদেষ্টা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ২৩ অক্টোবরের সিদ্ধান্ত পাল্টে বিএনপির দাবির বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়। এরপরই জামায়াতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের আপত্তি তুলে ধরে। একই সঙ্গে এনসিপির পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে ‘নিরপেক্ষতা’ ভঙ্গের অভিযোগ এনে তার কাছেই চিঠি পাঠানো হয়। পাশাপাশি দলটির পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনকেও চিঠি দেওয়া হয়।
বিশ্লেষকরা যা বলছেন: অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, একটা চরম অনৈক্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল, তারা কীভাবে হারানো ঐক্য ফিরে পেতে পারে, সেটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদের মতে প্রতীক নির্ধারণে প্রার্থীর স্বাধীনতা থাকা উচিত। কারণ সব দলের সাংগঠনিক শক্তি একই রকম নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ভোটাররা এখনো প্রার্থীর চেয়ে প্রতীকে নির্ভর। তাই জয়ের সম্ভাবনা বাড়াতে বড় দলের প্রতীকে ভর করতে চান প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে ভোটার সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ তাদের। কেবল মার্কা নয় প্রার্থীর যোগ্যতা-সক্ষমতা বিবেচনা করার পরামর্শ তাদের।
ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, জোটবদ্ধ ভোটের ক্ষেত্রে তৃণমূলের ভোটারদের প্রার্থী পছন্দও ভিন্ন আবহে রূপ নিতে পারে। তৃণমূলের কর্মীরা মনে করতেই পারে, প্রতীক থাকা সত্ত্বেও জোটের প্রার্থীকে তারা ভোট দেবে না। সেখানে যদি বিদ্রোহী প্রার্থীর আবির্ভাব ঘটে তখন পরিস্থিতি আরও অন্যরকম হতে পারে।
নির্বাচন বিশ্লেষক মুনিরা খান বলেন, বটগাছের নিচে ছোট গাছ যেমন কোনো দিন বড় হতে পারে না, এটিও অনেকটা সেরকমই। বড় দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সেই প্রতীক নিয়ে কোনোভাবে সংসদে যাওয়া আর নিজের দলকে প্রতিষ্ঠিত করা ভিন্ন কাজ।
দল ছোট হলেও স্বকীয়তা বজায় রেখে বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে আসাকেই ইতিবাচক বলে মনে করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আরপিও সংশোধন করলে এখন সমস্যা তৈরি হতো না। জোটগত ইলেকশন ও বড় দলের প্রতীকে ইলেকশন করে ছোট দলগুলো নিজস্ব স্বকীয়তা হারাচ্ছে। তাদের মূল বার্তাগুলো মানুষ বুঝতে পারছে না। কারণ, মানুষ ভোট দেয় প্রতীক দেখে।
আরপিও সংশোধনে অসন্তোষ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির: নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে ‘আলোচনা না করেই’ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ অবস্থানের কথা তুলে ধরেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন বড় চ্যালেঞ্জের জায়গা। বাস্তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কোনো এজেন্ডা আকারে বিশেষ করে আরপিও এবং আচরণবিধির ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা হয়নি। এ নিয়ে আমরা অসন্তোষ জানিয়েছি। সরকারের তরফে ব্যবস্থা নিয়েছে- এটা বলে ইসির দায় এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
বিকেপি/এমবি

