দেশে ১০ জন শিশুর মধ্যে ৪ জনের রক্তে ‘উদ্বেগজনক মাত্রায়’ সীসা
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২০:৫৪
বাংলাদেশে শিশু ও নারীদের মধ্যে সিসা দূষণ উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও বিকাশের জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে। দেশের প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে চারজনের রক্তে উদ্বেগজনক মাত্রার সিসা রয়েছে। ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩৮ শতাংশ এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রায় ৮ শতাংশের রক্তে সিসার মাত্রা নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি। ঢাকায় এই সমস্যা সবচেয়ে তীব্র, যেখানে ৬৫ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী আক্রান্ত।
রোববার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এমআইসিএস-২০২৫ জরিপের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপে আরও উঠে এসেছে যে, দেশের শিশুদের অর্ধেকের বেশি ধনী পরিবারের এবং প্রায় ৩০ শতাংশ দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের রক্তে সিসার মাত্রা বেশি। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হারও বেড়েছে; ২০১৯ সালে কম ওজনের শিশু ছিল ৯.৮ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে বেড়ে ১২.৯ শতাংশে পৌঁছেছে। মায়েদের অ্যানিমিয়া এখনও উচ্চ, ৫২.৮ শতাংশ নারী অ্যানেমিক। শিশুশ্রমও বেড়েছে, ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৯.২ শতাংশ শিশুশ্রমে জড়িত, যা ২০১৯ সালের ৬.৮ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। সহিংসতার শিকার শিশুদের সংখ্যা ৮৬ শতাংশ।
শিশুদের সুরক্ষা ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৮০ শতাংশ হলেও, উচ্চতর স্তরে উপস্থিতি কম এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে অনেক শিশু মৌলিক দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। এছাড়া ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৫৯ শতাংশের জন্ম নিবন্ধন হয়েছে, কিন্তু মাত্র ৪৭ শতাংশের জন্ম সনদ আছে।
শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য, পুষ্টি, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, শিশুশ্রম ও সহিংসতা রোধ, এবং শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নীতিনির্ধারকদের লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা এমআইসিএস ২০২৫ জরিপের মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হয়েছে। ইউনিসেফ এই তথ্যকে সুনির্দিষ্ট কাজে পরিণত করতে এবং কোনো শিশু যেন বাদ না পড়ে সেই লক্ষ্যে সরকারের নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স উভয়ই এই জরিপের ফলাফল শিশুদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সরবরাহ করছে এবং ভবিষ্যতে নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নে সহায়তা করবে বলে উল্লেখ করেছেন।

