ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার আগেই সারা দেশে পুলিশের ৫২৭টি থানায় নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে পদায়ন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো লটারির মাধ্যমে এসব কর্মকর্তাদের নির্বাচিত করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের মাঠ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে। রেঞ্জ ডিআইজি, মহানগর কমিশনার, পুলিশ সুপার (এসপি), অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পরিবর্তন করা হবে। নির্বাচন সামনে রেখে এসপি পদায়নের জন্য এরই মধ্যে লটারি করা হয়েছে।
প্রথমবারের মতো থানার ওসি পদায়নও হয় লটারির মাধ্যমে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য লটারি করে ওসি পদায়নের আগে সৎ, নিরপেক্ষ পরিদর্শকের তালিকা ইউনিট প্রধানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। তার ওপর ভিত্তি করেই এই লটারি অনুষ্ঠিত হয়। লটারিতে মোট ৫২৭ থানায় নতুন ওসি পদায়ন করা হয়েছে। পদায়নকৃতদের নামের তালিকায় প্রস্তাবিত লেখা রয়েছে। তবে মেট্রোপলিটন এলাকার থানাগুলোতে লটারি নয়, বরং সংশ্লিষ্ট কমিশনাররা অভ্যন্তরীণভাবে ওসি পদায়নের দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন ঘিরে গুরুত্ব বিবেচনা করে ৬৪ জেলাকে এ, বি, সি-তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল, যশোর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, দিনাজপুর জেলা। বাকি জেলাগুলো ‘বি’ এবং ‘সি’ ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়েছে। পদায়নের ক্ষেত্রে প্রথমে ‘যোগ্য’ কর্মকর্তাদের বাছাই করে একটি তালিকা করা হয়।
পদায়নের মধ্যে- ঢাকা রেঞ্জে ১৩ জেলায় ৯৮ থানার ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১ জেলায় ১১১ থানার ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে, খুলনা রেঞ্জে ১০টি জেলায় ৬৪ থানার ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ৪ থানায় ৩৬ ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে, বরিশাল রেঞ্জের ৬ জেলায় ৪৬ ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে, সিলেট রেঞ্জের ৪ জেলায় ৩৯ থানার ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে, রাজশাহী রেঞ্জে ৮ জেলায় ৭১ থানার ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে এবং রংপুর রেঞ্জের ৮ জেলার ৬২ থানার ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে থানার সংখ্যা ৬৩৯টি। এরমধ্যে জেলা পর্যায়ে থানার সংখ্যা ৫২৭, মেট্রোপলিটন এলাকায় ১১০। মেট্রোপলিটন এলাকার ১১০টি থানার ক্ষেত্রে লটারি হবে না বলে জানায় সূত্রটি। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) লটারির মাধ্যমে পদায়ন করা হয়।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, অতীতে এসপি হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁদের বাদ দেওয়া হয়। পুলিশ ক্যাডারের ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে তালিকা করা হয়। সে তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে লটারি করে ৬৪ জনকে নির্বাচন করা হয়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সব জেলার এসপি ও ওসিদের লটারির মাধ্যমে বদলির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ৬ আগস্ট সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সেদিন তিনি বলেছিলেন, যেকোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। নির্বাচনের সময় দেখা যায় প্রার্থীরা তাদের আসনে পছন্দের ডিসি, এসপি কিংবা ওসিকে পদায়ন করতে চান। কিন্তু আমরা এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচনের আগেই পুলিশ সুপার এবং ওসি বদলি লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।
যদিও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে পুলিশ সুপার ও থানার ওসি হিসেবে পদায়নের জন্য বাছাই তালিকা প্রণয়ন করার কথা বলা হয়। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, পদায়ন, বদলি, পদোন্নতির ক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিকেপি/এমএইটএস

