গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
বাংলাদেশসহ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে গণভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে জনগণ সরাসরি জাতীয় কোনো ইস্যুতে মতামত প্রদান করে। নির্বাচন হলো প্রতিনিধি বাছাইয়ের প্রক্রিয়া, আর গণভোট হলো সরাসরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার। যেখানে জনগণ কেবল একজন প্রার্থী নির্বাচন করে না, বরং একটি নির্দিষ্ট প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রকে নির্দেশনা দেয়। গণতান্ত্রিক চর্চা যত পরিণত হয়, গণভোটের কার্যকারিতা ততই স্পষ্ট হয়।
গণভোট সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে আহ্বান করা হয়। প্রথমত, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত যেমন সংবিধান সংশোধন, নতুন কোনো শাসনব্যবস্থা গ্রহণ, জাতীয় নীতির পরিবর্তন বা স্বাধীনতার প্রশ্নে জনগণের সরাসরি মতামত প্রয়োজন হলে গণভোট করা হয়।
দ্বিতীয়ত, কোনো শাসকগোষ্ঠী বা সরকার তাদের বৈধতা বা জনসমর্থন প্রমাণ করতে গণভোটের পথ অবলম্বন করতে পারে।
তৃতীয়ত, কোনো ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতানৈক্য থাকলে সেটি সরাসরি জনগণের ওপর ন্যস্ত করা হয়।
সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডসহ বহু দেশে গণভোট খুবই পরিচিত মাধ্যম। উদাহরণ হিসেবে ব্রেক্সিট— ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়বে কি না, এই সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ জনতার হাতে দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশে গণভোটের আইনি কাঠামো সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের ১৪২(১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংবিধানের কিছু মূল কাঠামো বা গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি গণভোট আহ্বান করতে পারেন। তবে শর্ত হলো, এ জাতীয় প্রস্তাব সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেতে হবে। অর্থাৎ, গণভোট হিসেবে প্রয়োগযোগ্য ব্যবস্থা থাকলেও, এটি বাস্তবে কার্যকর হতে গেলে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য অপরিহার্য।
বাংলাদেশের ইতিহাসে তিন গণভোট
প্রথম গণভোট : ১৯৭৭
১৯৭৫ সালের নানা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পালাবদলের পর সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে থাকা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান দেশের রাজনীতিতে একটি প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করেন। পরে ১৯৭৭ সালের ২২ এপ্রিল তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি জাতির উদ্দেশে রেডিও ও টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে গণভোটের ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার মূল লক্ষ্য ছিল তাঁর নেতৃত্ব ও শাসনব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা পরীক্ষা করা এবং জাতীয় পর্যায়ে তাঁর ক্ষমতার বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা।
ভোটারদের সামনে প্রশ্ন ছিল—
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তার নীতি ও কর্মসূচির প্রতি জনগণের আস্থা আছে কি না।
অর্থাৎ, ‘হ্যাঁ’ ভোট মানে আস্থা, আর ‘না’ ভোট মানে অনাস্থা।
ভোটগ্রহণ হয় ১৯৭৭ সালের ৩০ মে, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সারাদেশে ২১,৬৮৫টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। তখন দেশের মোট ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ। ভোট নেওয়া হয় ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ প্রতীকের মাধ্যমে। সরকারি ফলাফল অনুযায়ী মোট ভোট পড়েছে ৮৮.১ শতাংশ। যেখানে ‘হ্যাঁ’ ভোট - ৯৮.৯ শতাংশ ও ‘না’ ভোট - ১.১ শতাংশ।
ফলাফলে দেখা যায়, বিপুল সংখ্যক ভোটার জিয়াউর রহমানের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন। এই গণভোটের মাধ্যমে তার ক্ষমতার ভিত্তি আরও দৃঢ় হয় এবং তিনি পরে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখেন।
দ্বিতীয় গণভোট : ১৯৮৫
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। রাজনৈতিক বৈধতা ও নেতৃত্বের ওপর জনগণের আস্থা যাচাই করার জন্য ১৯৮৫ সালে দেশে দ্বিতীয় গণভোটের আয়োজন করা হয়।
ভোটারদের সামনে প্রশ্ন ছিল—
এরশাদের নীতি ও কর্মসূচি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য কি না এবং স্থগিত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারবেন কি না।
ভোটগ্রহণ হয় ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ। ভোট নেওয়া হয় ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ‘হ্যাঁ’ বাক্সে এরশাদের ছবি ছিল, যা প্রতীকীভাবে তার প্রতি সমর্থনের প্রকাশ নির্দেশ করত।
সরকারি ফলাফল অনুযায়ী মোট ভোট পড়েছে ৭২.২ শতাংশ। ‘হ্যাঁ’ ভোট - ৯৪.৫ শতাংশ ও ‘না’ ভোট - ৫.৫ শতাংশ। ফলাফল অনুযায়ী এরশাদ দাবি করেন যে জনগণ তার শাসন ও উন্নয়ন নীতিকে সমর্থন দিয়েছেন। তবে এ গণভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে পরবর্তী সময়ে নানা রাজনৈতিক বিতর্ক ওঠে।
তৃতীয় গণভোট : ১৯৯১
১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের মুখে ৬ ডিসেম্বর সামরিক শাসক এরশাদ পদত্যাগ করেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়। সরকার গঠন করার পর দেশের দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ৬ আগস্ট ১৯৯১ তারিখে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী বিল সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জনগণের মতামত যাচাইয়ের জন্য গণভোট আয়োজন করা হয়।
ভোটারদের সামনে প্রশ্ন ছিল—
আপনি কি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সংসদীয় পদ্ধতি চান?
ভোটগ্রহণ হয় ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯১। ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ দিয়ে সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে মত দেন, আর ‘না’ দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতির প্রতি সমর্থন জানান। সরকারি ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায় ভোটে অংশগ্রহণের হার ছিল ৩৫.২ শতাংশ। মোট ভোট প্রদানের হারে যেখানে ৮৪.৩৮ শতাংশ ভোটার ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়ে সংসদীয় প্রজাতন্ত্রকে সমর্থন করেন, অন্যদিকে ১৫.৬২ শতাংশ ভোটার ‘না’ ভোট দেন।
আসছে চতুর্থ গণভোট : ২০২৬
দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চতুর্থ গণভোট একেবারে ব্যতিক্রম হবে। কারণ এইবার প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একটি গণভোট যুক্ত হয়েছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ভাগে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবারের গণভোটের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দায়িত্ব গ্রহণ করা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক সংস্কার ও রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এসেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর জুলাই সনদের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের বৈধতা নিশ্চিত করতে গণভোটের প্রস্তাব উত্থাপন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে যে সনদে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আদেশ ও এর তফসিলে থাকা সংশোধনী প্রস্তাব গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হবে।
চতুর্থ গণভোটের ব্যালট
এবারের গণভোটে ব্যালটে প্রশ্ন থাকবে চারটি। ব্যালটে লেখা থাকবে—
জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি আছে? (হ্যাঁ/না)
ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ) আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ) সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পীকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসহ তফসিলে বর্ণিত যে ৩০টি বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে ঐকমত্য হয়েছে—সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ) জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অপরাপর সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রশ্নগুলোর শেষাংশে ব্যালটে একটি বক্সের দুই পাশে হ্যাঁ ও না লেখা থাকবে। ভোটারদের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ চিহ্ন দিয়ে নির্ধারিত বাক্সে ভোট প্রদান করতে হবে।
গণভোট আইন বাতিল ও ফিরে আসা
১৯৯১ সালে তৃতীয় গণভোটের আগে দেশে গণভোট আইন প্রণয়ন করা হয়। সংসদে পাস হওয়া ওই আইনের প্রস্তাবনায় উল্লেখ ছিল— সংবিধানের প্রস্তাবনা কিংবা ৮, ৪৮, ৫৬, ৫৮, ৮০, ৯২(ক) বা ১৪২ অনুচ্ছেদ সংশোধনের জন্য সংসদে কোনো বিল ১৪২(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দেবেন কি দেবেন না। সেই সিদ্ধান্ত যাচাই করতে সংবিধানের ১৪২(১ক) অনুচ্ছেদ মোতাবেক গণভোটের ব্যবস্থা করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। এই ভিত্তিতেই আইনটি প্রণয়ন করা হয়।
পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের সেই বিধান বাতিল করা হয়। ফলে দীর্ঘদিন গণভোট আয়োজনের সাংবিধানিক সুযোগ আর থাকেনি।
তবে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর, একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের মামলায় রায় দেয়। সেই রায়ে— তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে পুনর্বহাল এবং গণভোটের বিধানও সক্রিয় করা হয়। রায়টিকে কেউ চ্যালেঞ্জ না করায় বর্তমানে গণভোট আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গণভোটের বাস্তবতা
বর্তমানে বাংলাদেশে গণভোটের বাস্তবতা বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আসে। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গণভোটের কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
প্রথমত, রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যন্ত মেরুকৃত। দলীয় আস্থা সংকট, প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর পারস্পরিক সন্দেহ এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর আস্থাহীনতা গণভোট আয়োজনকে অত্যন্ত কঠিন করে তোলে। গণভোট একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রক্রিয়া— এটি করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা জরুরি, যা বর্তমানে দেখা যায় না।
দ্বিতীয়ত, প্রশাসনিক সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গণভোট করতে হলে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি, মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পর্যবেক্ষক ও পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া— সবকিছুই সুষ্ঠু হতে হবে। বিগত কয়েকটি নির্বাচন বিতর্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক বা প্রশ্ন রয়েছে।
তৃতীয়ত, একটি সফল গণভোটের জন্য জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণভোট সাধারণত অত্যন্ত জটিল ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে হওয়ার কারণে জনগণকে বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে হয়। গণমাধ্যম, বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল— সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে জনগণের কাছে বিষয়টি বুঝিয়ে তুলতে হয়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও তথ্য পরিবেশে এই ধরনের জনশিক্ষা প্রচারণা সফল হবে কি না— এটিও একটি প্রশ্ন।
তবে সব চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও কিছু সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও ইতিহাস গবেষক অধ্যাপক ড. মোসলেম উদ্দিন হাওলাদার। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘বাংলাদেশে আসন্ন গণভোট দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে। আমি মনে করি, এই গণভোটের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ভোটারদের আস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ এবং গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা সমস্যা ভোটার অংশগ্রহণকে প্রভাবিত করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— নির্বাচনী তদারকি ব্যবস্থার প্রস্তুতি কতোটা নির্ভুল হবে তার ওপর গণভোটের ফলাফল নির্ভর করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই গণভোট দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে শক্তিশালী করার সম্ভাবনা বহন করছে। সঠিক প্রস্তুতি এবং সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণ হলে এটি সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। গণভোটের মাধ্যমে জনগণ শুধুমাত্র প্রস্তাবিত পরিবর্তনের প্রতি মত প্রকাশ করবে না, বরং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক ঐক্য বৃদ্ধিরও একটি সুযোগ তৈরি হবে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও জনসচেতনতা নিশ্চিত করতে সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এটি হলে, গণভোট শুধু একটি রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা হবে না, বরং দেশের গণতান্ত্রিক পরিপক্বতার প্রতিফলন হবে।’
এসআইবি/এমএইচএস


