বিজয়ের মাস
যৌথ বাহিনীর ঢাকা দখলের লড়াইয়ের অপেক্ষা
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৯
যৌথ বাহিনীর সদর দপ্তর থেকে ১১ ডিসেম্বর বলা হয়, জামালপুর ও ময়মনসিংহের পতনের পর ঢাকার সংকট ঘনীভূত। উত্তর-পূর্বে যৌথ বাহিনী মেঘনা অতিক্রম করে ঢাকা অভিমুখী। অপেক্ষা এখন যৌথ বাহিনীর ঢাকা দখলের লড়াইয়ের।
যৌথ বাহিনীর ঝটিকা আক্রমণের মুখে রাতে তুমুল যুদ্ধের পর কুষ্টিয়া শহর মুক্ত হয়। আগের দিন যৌথ বাহিনী ঝিনাইদহ থেকে ট্যাংক নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশের মুখে পাকিস্তানি বাহিনীর ফাঁদে পড়েছিল। তখন শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। এরপর ভারতীয় বিমানের হামলায় পাকিস্তানি সেনারা হতাহতদের ফেলে সকালে পালিয়ে যায়। ঈশ্বরদী থেকে পালানোর সময় পাকিস্তানি সেনারা হার্ডিঞ্জ রেলসেতুর একাংশের গার্ডার ধ্বংস করে।
যশোর থেকে ঢাকা অভিমুখী যৌথ বাহিনী মাগুরা শহর পেরিয়ে মধুমতী নদীর তীরে পৌঁছে যায়। নদীর ওপারে পাকিস্তানি সেনারা ঘাঁটি গেড়ে তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। খুলনা অঞ্চলে যৌথ বাহিনী এদিন খুলনা জেলা শহরের ১০ মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। যৌথ বাহিনীর আরেক অংশ ভৈরব বাজারের দক্ষিণে সড়কপথ ধরে এগিয়ে যায় ঢাকার দিকে। চাঁদপুর ও কুমিল্লার মধ্যবর্তী লাকসামে ২৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ও একটি বালুচ রেজিমেন্টের প্রায় ৪০০ পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে।
ময়মনসিংহ, জামালপুর, নোয়াখালী, হিলিসহ রংপুর জেলার গাইবান্ধা, ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, দুর্গাদিঘি প্রভৃতি স্থান এদিন মুক্ত হয়। ভোরের আগেই পাকিস্তানি সেনারা ময়মনসিংহ শহর থেকে পালিয়ে যায়। মুক্ত হয় ময়মনসিংহ শহর। পালানোর সময় পাকিস্তানিরা শম্ভুগঞ্জ সেতু ধ্বংস করে। পাকিস্তানি বাহিনীর সেনারা বেশির ভাগ স্থানেই যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেনি। বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত তারা হয় পালিয়ে যায়, নয় আত্মসমর্পণ করে।
গত ২৪ ঘণ্টায় আত্মসমর্পণ করে প্রায় দুই হাজার পাকিস্তানি সেনা। ঢাকা থেকে এদিন বিদেশি নাগরিকদের অপসারণের কথা থাকলেও পাকিস্তানিদের বাধার মুখে সেটি স্থগিত হয়ে যায়। যশোর সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়ার পর ১১ ডিসেম্বর যশোর শহরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, তার সরকার বাংলাদেশের চারটি রাজনৈতিক দলকে বেআইনি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ ভাসানী) প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এক বিবৃতিতে তার দলের সদস্য ও সমর্থকদের বাংলাদেশ সরকার, আওয়ামী লীগ, মুক্তিবাহিনী এবং অন্য দল ও গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একযোগে স্বাধীনতাসংগ্রামকে জোরদার করে তোলার নির্দেশ দেন।
জাতিসংঘের একটি সূত্র এদিন জানায়, বাংলাদেশে নিয়োজিত একদল জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি বাহিনীকে সরিয়ে নিতে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর মাধ্যমে জাতিসংঘের সাহায্য চেয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বেইজিংয়ের কূটনৈতিক মহল বলেছে, চীন শুধু জাতিসংঘের ভিতরেই পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে যাবে। সেনা পাঠিয়ে ভারতে আক্রমণ করবে বলে মনে হয় না।
বিকেপি/এনএ

