ভোটে ‘সহযোগী’ সেজে থাকা অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সতর্ক করল ইসি
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৫
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠকে শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের উদ্দেশে ‘বন্ধু বা সহযোগী’ সেজে থাকা সম্ভাব্য নাশকতাকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পর রোববার প্রথম কার্যদিবসে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। সাম্প্রতিক সময়ে একজন সম্ভাব্য প্রার্থীর ওপর গুলির ঘটনার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করছে কমিশন।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচনী মাঠে যারা পাশে দাঁড়াচ্ছে, সবাই যে প্রকৃত সহযোগী—তা ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নিজেদের আশপাশে এবং দলের ভেতরেও সতর্ক নজর রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, আপাতভাবে সহযোগী সেজে থাকা ব্যক্তিরাই কখনো কখনো নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আগেভাগেই সতর্ক না হলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়।
নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক গুলির ঘটনা ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে ভীতি তৈরির অপচেষ্টা হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু এলাকায় সহিংসতার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার সঙ্গে বৃহত্তর কোনো ষড়যন্ত্র জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, চোরাগোপ্তা হামলা বা ভোট বানচালের চেষ্টা হলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তারা কোনোভাবেই সফল হতে পারবে না।
বৈঠকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। জানা যায়, ভোটকে সামনে রেখে জামিনে মুক্ত অনেক সন্ত্রাসী বাইরে রয়েছে এবং কিছু এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের ঝুঁকি বেড়েছে। এ অবস্থায় চেকপোস্ট বাড়ানো এবং বিশেষ অভিযান জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানের দ্বিতীয় ধাপ সমন্বিতভাবে শুরু হয়েছে বলেও জানানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করলেও আত্মতুষ্টিতে না ভোগার আহ্বান জানায় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের মতে, একটি ঘটনার পর ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে আগাম প্রতিরোধই বেশি কার্যকর।
বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপের প্রবণতা নিয়েও আলোচনা হয়। কমিশন মনে করে, একে অপরকে দোষারোপ করলে নাশকতাকারীরা সেই সুযোগ নিতে পারে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতেও সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রার্থীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কমিশন জানায়, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তবে ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্সসংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো কমিশনের কাছে স্পষ্ট নয়।
নির্বাচন কমিশনের মতে, নির্বাচনের সময় সব ঝুঁকি শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় থাকলে এবং সবাই সতর্ক হলে সহনীয় ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট আয়োজন করা সম্ভব।
কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচন ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা সেলগুলোও কাজ শুরু করেছে, যাতে অপতথ্য ও গুজবের বিস্তার রোধ করা যায়।
নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা, সম্মিলিত উদ্যোগ ও সতর্কতার মধ্য দিয়ে ভোটের মাঠে শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
এসআইবি/এমবি


