Logo

জাতীয়

আজ বিজয়ের দিন

Icon

রায়হান উল্লাহ

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫১

আজ বিজয়ের দিন

আজ ১৬ ডিসেম্বর, ৫৫তম মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য-বীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। আজকের দিনে বিজয়োল্লাসে ভাসবে দেশ, আনন্দে উদ্বেলিত হবে গোটা জাতি। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে দিবসটি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি দ্বিতীয় বিজয় দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তারা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের আত্মত্যাগের কথা, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল।

পাকিস্তানের নৃশংস হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে এ দেশের ঘুমন্ত, নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর ট্যাংক-কামানের মতো ভয়ংকর মারণাস্ত্র নিয়ে গণহত্যার পৈশাচিকতায় মেতে উঠলে সেখান থেকেই শুরু হয় প্রতিরোধ সংগ্রাম।

দেশের বীর সন্তানরা শত্রুর মোকাবিলায় ছুটে গিয়েছিলেন যুদ্ধের ময়দানে। জীবনের মায়া ছিল তাদের কাছে তুচ্ছ। তাদের ছিল না পর্যাপ্ত যুদ্ধপ্রশিক্ষণ, ছিল না উন্নত সমরাস্ত্র। সাহস ও সংগ্রামেই তারা উজ্জীবিত হয়েছিলেন। যার কাছে যা ছিল, তাই নিয়েই দেশের বীর সন্তানেরা শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মরণপণ লড়াই করেছিলেন মুক্তির সংগ্রামে।

দীর্ঘ নয় মাস হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতো শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে সব ধর্ম, বর্ণ ও ভাষার মানুষ একত্রে অসম যুদ্ধ করেছেন। ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম এবং বিপুল সম্পদহানির মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ছিনিয়ে এনেছিলেন চূড়ান্ত বিজয়। জাতিকে মুক্ত করেছিলেন পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে। ডিসেম্বরের কুয়াশাঢাকা বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার সূর্য, উড্ডীন হয়েছিল লাল-সবুজ পতাকা। বাতাসে অনুরণিত হয়েছিল অগণিত কণ্ঠের সুর—‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি…’। আজকের দিনটি তাই একদিকে চিরগৌরব ও আনন্দের, অন্যদিকে স্বজন হারানোর বেদনাতেও নীল।

আজ বিজয়ের এই দিনে জাতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর সন্তানদের। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভরে যাবে অগণিত মানুষের শ্রদ্ধার ফুলে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বিদেশি কূটনীতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। অপরাহ্নে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

আজ সরকারি ছুটি। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত থাকবে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন সংবাদপত্র, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশেষ আয়োজন সম্প্রচার করা হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা ও সরকারি শিশু সদনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবেশন করা হবে বিশেষ খাবার।

স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে—রাষ্ট্রপতি
বিজয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ঐক্যের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তিনি দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বিজয়ের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

বিজয় দিবস হোক জাতীয় জীবনে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন—প্রধান উপদেষ্টা
বিজয় দিবসে দেওয়া বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এবারের বিজয় দিবস হোক জাতীয় জীবনে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে যে নবযাত্রা সূচিত হয়েছে, তা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করার শপথ নেওয়ার দিন আজ।

বিজয় দিবসে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ
বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের অংশ হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারের বিশেষ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার আজ বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে পতাকা বহন করে স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবেন। এর মাধ্যমে নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপিত হবে। এর আগে একই স্থানে বেলা ১১টা থেকে তিন বাহিনীর পৃথক ফ্লাইপাস্ট প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।

১৬ ডিসেম্বর জাতির এক মহাকাব্যিক দিন—তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৬ ডিসেম্বরকে জাতির অহংকার, আনন্দ ও বেদনার এক মহাকাব্যিক দিন হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ১৯৭১ সালে প্রিয় মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত হলেও চক্রান্তকারীদের নীলনকশা এখনো চলমান। আগ্রাসী শক্তি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অবজ্ঞা করার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। তাদের দেশীয় এজেন্টরা অর্জিত স্বাধীনতাকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

গতকাল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মুক্তিযুদ্ধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর