জাতীয় সংসদ নির্বাচন
প্রার্থীদের ব্যয়, তহবিল ও প্রচারণায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৬
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয়, তহবিলের উৎস এবং প্রচারণা কার্যক্রমে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনি ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) জারি করা ‘পরিপত্র-৪’-এ প্রার্থীদের তহবিল সংগ্রহ, ব্যয় নির্বাহ, প্রচারণা সামগ্রী ব্যবহার ও নিষিদ্ধ কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর এসব বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
তহবিলের সম্ভাব্য উৎস দাখিল বাধ্যতামূলক
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ই নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের জন্য তহবিলের সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী নির্ধারিত ‘ফরম-২০’-এ জমা দিতে হবে। এতে প্রার্থীর নিজস্ব আয়, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে পাওয়া ঋণ বা অনুদান, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সহায়তা এবং অন্যান্য উৎসের অর্থের বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে।
এ ছাড়া প্রার্থীকে তার সম্পদ ও দায়ের বিবরণী এবং বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব ‘ফরম-২১’-এ দাখিল করতে হবে। সর্বশেষ আয়কর রিটার্নের অনুলিপিও সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক।
নির্বাচন কমিশনে আলাদা করে কপি পাঠাতে হবে
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এসব বিবরণী জমা দেওয়ার পাশাপাশি প্রার্থীকে রেজিস্টার্ড ডাকযোগে একই কাগজপত্রের অনুলিপি নির্বাচন কমিশনের কাছেও পাঠাতে হবে। পরে ঘোষিত উৎসের বাইরে অন্য কোনো উৎস থেকে অর্থ এলে সেটির জন্য আলাদা সম্পূরক বিবরণী দাখিল করতে হবে।
নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা ও নিষিদ্ধ খাত
পরিপত্র অনুযায়ী, একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ নির্বাচনী ব্যয় ভোটারপ্রতি ১০ টাকা অথবা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা—এর বেশি হতে পারবে না। এই ব্যয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলের ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তবে এই অর্থ দিয়ে পোস্টার ছাপানো, নির্ধারিত আকারের বাইরে ব্যানার বা ফেস্টুন তৈরি, ৪০০ বর্গফুটের বেশি প্যান্ডেল নির্মাণ, অতিরিক্ত মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহার, ভোটারদের আপ্যায়ন, শোভাযাত্রা বা মিছিলের জন্য যানবাহন ব্যবহার, আলোকসজ্জা কিংবা দেয়াল লিখন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পোস্টার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
নতুন আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না। পাশাপাশি পলিথিন, প্লাস্টিক বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদানে তৈরি ব্যানার, লিফলেট ও ফেস্টুন ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ব্যানার, লিফলেট ও ফেস্টুন সাদা-কালো হতে হবে এবং নির্ধারিত আকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এতে প্রার্থীর নিজস্ব ছবি ও প্রতীক ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। দলীয় প্রার্থী হলে কেবল বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা
নিষিদ্ধ কার্যক্রম প্রতিরোধে পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অবৈধ পোস্টার, বড় ব্যানার, অতিরিক্ত মাইক, অবৈধ প্যান্ডেল কিংবা দেয়াল লিখন নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কঠোর শাস্তির বিধান
নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রার্থী সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব ও বিবরণী দাখিল না করলেও তা দুর্নীতিমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
আচরণবিধি কঠোরভাবে মানার আহ্বান
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ফলাফল গেজেটে প্রকাশের আগ পর্যন্ত পুরো সময়জুড়েই আচরণবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে। মাঠপর্যায়ে তদারকি জোরদার করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে অবৈধ পোস্টার ও প্রচারসামগ্রী অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসআইবি/এমএইচএস

