Logo

জাতীয়

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে অগ্নিসংযোগ, ঘটনাস্থলে সেনা মোতায়েন

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫৩

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে অগ্নিসংযোগ, ঘটনাস্থলে সেনা মোতায়েন

দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিএম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে হামলা শুরু হয়।

রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় ঘটনাস্থলে সেনাসদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। তাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

রাজধানীর তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যশৈন্যু মারমা জানিয়েছেন, হামলাকারীদের নিবৃত করার চেষ্টা করছেন তারা।

কয়েকশ লোক একত্রিত হয়ে হামলা চালিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া লাইভ ভিডিওতে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা, ভাঙচুর করতে দেখা যায়।

পত্রিকা দুটির কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর গণমাধ্যমকর্মীরা ভেতরে আটকা পড়েছেন।

ডেইলি স্টার সাংবাদিক রবিউল কমল ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, 'আমার অফিস পুড়ছে। আমার কলিগরা ছাদে আটকে আছে। তারা ধোয়ায় নিশ্বাস নিতে পারছে না। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।'

আততায়ীর গুলিতে আহত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। 

হাদি হত্যার প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে বিক্ষুব্ধ অংশগ্রহণকারীরা বলছেন। তারা প্রশাসনকে ব্যর্থ দাবি করে খুনিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছেন সরকারের প্রতি। 

সিঙ্গাপুরে ওসমান হাদির চিকিৎসা দেখভালের সঙ্গে যুক্ত থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন। রাত পৌনে ১০টায় ওসমান হাদির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টেও মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে। পোস্টটিতে লেখা হয়, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।’

জুলাই অভ্যুত্থানের পরিচিত মুখ ওসমান হাদি ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য প্রচার চালাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার দুপুরে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে তাঁকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। গত সোমবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গে তাঁর ভাই ছাড়াও বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সরা গিয়েছিলেন।

ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারী হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদ নামে একজনকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁর সহযোগী আলমগীর শেখ মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ ও র‍্যাব। এই দুজন অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে আটক ও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‍্যাব। তাঁদের মধ্যে ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০) ও মা মোসা. হাসি বেগম (৬০), স্ত্রী সাহেদা পারভিন সামিয়া ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু রয়েছেন।

ফয়সালের বাবা–মা ছাড়া বাকিরা হলেন মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, মো. কবির, আব্দুল হান্নান, মো. হিরন, মো. রাজ্জাক, ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া আক্তার এবং হালুয়াঘাট সীমান্তে মানব পাচারকারী হিসেবে পরিচিত সিমিরন দিও ও সঞ্জয় চিসিম।

ওসমান হাদিকে দিনে-দুপরে গুলি করে হত্যাচেষ্টার এই ঘটনার পরপরই দেশে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘটনাটিকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন, নির্বাচনের পথে গুপ্ত হামলা, নাশকতা বাড়তে পারে।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার এক মাস আগেই হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন শরিফ ওসমান হাদি। গত নভেম্বরে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছিলেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাঁকে ফোন ও মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ সমর্থকেরা তাঁকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে। তবে জীবননাশের আশঙ্কা সত্ত্বেও ‘ইনসাফের লড়াই’ থেকে পিছিয়ে যাবেন না।

আরিফ শেখ/এইচকে

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

হামলা ও ভাংচুর গণমাধ্যম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর