Logo

জাতীয়

নির্বাচনী পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে : ইসি

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:২৬

নির্বাচনী পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে : ইসি

রোববার আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সভার পর নির্বাচন ভবনে প্রেস ব্রিফিংয়ে ইসি। ছবি : সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সব বাহিনী ও সংস্থার প্রধানদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার যেকোনো চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা একসঙ্গে অংশ নেন। পরে অন্যান্য বাহিনী ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলাদাভাবে বৈঠক হয়।

বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অব.) বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর এটি আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে ইসির দ্বিতীয় সমন্বয় সভা। নির্বাচন কমিশনের জারি করা সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত পরিপত্র এবং মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বৈঠকের শুরুতে শহীদ ওসমান হাদিসহ কয়েকজনের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। একই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (বীর উত্তম), সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার এবং সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্যের জন্যও দোয়া করা হয়।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে যেসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে, সেগুলোর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি জানান, বৈঠকে ইসি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে— নির্বাচনের পরিবেশ বিকৃত করতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। এ ধরনের তৎপরতা রোধে বাহিনীসমূহকে কঠোর অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদারে মাঠপর্যায়ে যৌথ বাহিনীর অপারেশন পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব অভিযানে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং ভোটার, প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা তৈরিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্গম এলাকাগুলোতে বিশেষ নজরদারি এবং চেকপয়েন্ট কার্যক্রম জোরদার করা হবে।

হাদিকে গুলি করার পর বিএনপিসহ বিভিন্ন দল প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল। হাদিকে দাফনের পরদিন আজ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া মো. গোলাম পরওয়ার বলেন, তিন শ আসনের প্রার্থীরা এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

নির্বাচন কমিশন উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইলেও ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড তাতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে বলে মনে করে ইসি। তবে সানাউল্লাহ বলেন, ‘যাঁরা আমাদের উৎসবকে বিঘ্নিত করতে চান, তাঁরা ব্যর্থ হবেন। উৎসবের পরিবেশ ফেরত আসবে।’

ওসমান হাদির মৃত্যুর পর ক্ষোভ–বিক্ষোভের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনা পরোক্ষভাবে নির্বাচনী পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলেছে বলে স্বীকার করছে ইসি। সানাউল্লাহ বলেন, ‘বৃহত্তর আবেগ ও অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে দুষ্টচক্র যে কাজটি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে মর্মে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আশা হয়েছে মর্মে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’

এসব ঘটনাসহ ময়মনসিংহে একজনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা নিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, তাঁরা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ করছেন। জনমনে যাতে স্বস্তি ফেরত আসে, মানুষ যাতে আশ্বস্ত হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো যাতে যথাযথভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে, সে জন্য ইসি বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি তফসিল অনুযায়ী দল ও প্রার্থী যাতে নির্বিঘ্নে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন, সে নির্দেশনা বাহিনীগুলোকে দেওয়া হয়েছে।

আচরণবিধি প্রসঙ্গে তিনি জানান, কিছু বিচ্যুতি থাকলেও সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সহযোগিতামূলক মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। প্রাথমিক মূল্যায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এসব ঘটনার সঙ্গে মূলধারার কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন মূল হত্যাকারী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তদন্ত ও গ্রেপ্তার কার্যক্রম আরও জোরদার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

পোস্টাল ভোট বিষয়ে তিনি জানান, নিবন্ধনের জন্য আর চার দিন সময় রয়েছে। যোগ্য ভোটারদের দ্রুত নিবন্ধন সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের জন্য সময়সীমা কিছুটা বাড়ানো হতে পারে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধে যৌথ বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে আলোচনায় দুপুরে ইসিতে এই বৈঠক হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, তিন বাহিনী প্রধানদের উপযুক্ত প্রতিনিধি, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, ডিজিএফআই, এনএসআই, এনটিএমসি ও র‍্যাবের মহাপরিচালক, এসবি ও সিআইডির অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার, কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক অংশ নেন।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। সভায় ইসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কাছে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত নাশকতার ঘটনাগুলোর বিষয়ে জানতে চায়। তাঁদের জানানো হয়, এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

এই সভার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন নির্বাচন ভবনে যান। তাঁরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।

এই দুটি বৈঠকের পর বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে বিকেলে নির্বাচন ভবনে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসেন নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে কাজ করার নির্দেশনা ছিল। তবে অনেক মানুষ এই ভালো উদ্যোগের খারাপ সুযোগ নিয়েছেন। তাই নির্বাচন কমিশন এখন বাহিনীগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে।

‘আমরা মানবিক হব যাঁরা মানবিক তাঁদের প্রতি। যাঁরা দস্যুতা করতে চায়, ভ্যান্ডালিজম করতে চায়, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চায়, আমার ভাইকে হত্যা করতে চায়, তাঁদের প্রতি মানবিক হওয়ার দরকার নেই,’ বলেন তিনি।

এসআইবি/এইচকে 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সিইসি নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর