মূল্যস্ফীতি কমে ৮.২৯ শতাংশে, রিজার্ভ ছাড়াল ৩২ বিলিয়ন ডলার
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:০৯
ছবি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
দীর্ঘ সময় পর দেশের অর্থনীতিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর ২০২৫) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বাজেট ব্যয় নিয়ে এই সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ১২ মাসের গড় হিসেবে নভেম্বর ২০২৫-এ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে নভেম্বর মাসে এটি ছিল ৮.২৯ শতাংশ, যা গত জুন মাসেও ৯ শতাংশের উপরে ছিল। আশা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এটি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।
একই সাথে স্বস্তির খবর মিলেছে মজুরি প্রবৃদ্ধিতে। আগে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি বৃদ্ধির হারের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকলেও এখন তা কমে এসেছে। বর্তমানে মজুরি প্রবৃদ্ধির হার ৮.০৪ শতাংশ, যা প্রকৃত আয় বাড়াতে সহায়ক হচ্ছে।
দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম বড় অর্জন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি। ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২.৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা ২০২৪ সালের আগস্টে ছিল মাত্র ২৫ বিলিয়ন ডলার। প্রবাস আয়ের (রেমিট্যান্স) গতি বৃদ্ধি এবং মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়া এর প্রধান কারণ। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১৩.০৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭.১৪ শতাংশ বেশি।
এ সময় জানানো হয়, কৃষিখাতে আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬০.৯৫ লক্ষ মেট্রিক টন আমন উৎপাদন হয়েছে। বাকি ফসল ঘরে উঠলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আউশের উৎপাদনও গত অর্থবছরের তুলনায় ৭.২০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
বৈঠকে জানানো হয়, অর্থনীতিকে আরও উৎপাদনশীল করতে আমদানির ওপর থেকে বিধিনিষেধ অপসারণ করা হয়েছে। ফলে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পজাত কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। শিল্পজাত কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলার হার গত বছরের ১০.১ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমান অর্থবছরে ৪০.৯৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, অর্থ পাচার রোধ ও সুব্যবস্থাপনার ফলে চলতি হিসাবের (Current Account) ঘাটতি নাটকীয়ভাবে কমেছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৫ লক্ষ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
এমএইচএস

