ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ
সহিংসতা–হুমকির ঘটনা তদন্তের আহ্বান
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:০১
ফাইল ছবি
গত ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও হাইকমিশনারের বাসভবনের বাইরে ঘটে যাওয়া সহিংসতা এবং ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা কেন্দ্রে বিভিন্ন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর ভাঙচুরের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সরকারের গভীর উদ্বেগ জানাতে আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের তত্ত্বাবধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ এই ধরনের পরিকল্পিত সহিংসতা বা কূটনৈতিক স্থাপনার প্রতি হুমকিমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রণয় ভার্মাকে তলব করে ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও হাইকমিশনারের বাসভবনের বাইরে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনা, ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা কেন্দ্রে বিভিন্ন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর ভাঙচুরের ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে এই উদ্বেগ জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব ঘটনা কেবল কূটনীতিকদের নিরাপত্তা বিপন্ন করে না, বরং পারস্পরিক সম্মান, শান্তি ও সহনশীলতার মূল্যবোধকেও ক্ষুণ্ন করে। বাংলাদেশ ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, এসব ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত সম্পন্ন করতে এবং পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। এছাড়া ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কূটনৈতিক কর্মী ও স্থাপনার মর্যাদা-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার তার আন্তর্জাতিক-কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ সরকার।
এদিকে, ময়মনসিংহে পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাস হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বজরং দল। বিক্ষোভ চলাকালে কয়েকজন বিক্ষোভকারী পুলিশের একাধিক ব্যারিকেড ভেঙে কূটনৈতিক স্থাপনার দিকে এগোতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, তিন স্তরের ব্যারিকেড থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন বিক্ষোভকারী এগিয়ে যায় এবং অন্তত দুই স্তরের ব্যারিকেড ভাঙে। তাদের হাতে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড দেখা যায় এবং বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে দিপু চন্দ্র দাস হত্যার বিচার দাবি করা হয়। এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আজ আমরা যদি প্রতিবাদ না করি, তাহলে আমরাও দিপু হয়ে যাব।’
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করেও একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা এগিয়ে যায়। টাইমস অব ইন্ডিয়া ও দ্য হিন্দু জানায়, হাইকমিশনের আশপাশে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছিল, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের বালুকা এলাকায় ২৫ বছর বয়সী পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে জনতার হামলায় হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থী এই ধরনের সহিংসতা ও হুমকিমূলক কর্মকাণ্ড কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। বাংলাদেশ আশা করছে, ভারত সরকার দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এমএইচএস

