Logo

জাতীয়

বর্তমান সংকটে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কতটা ঝুঁকিতে?

Icon

দিল্লি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৪১

বর্তমান সংকটে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কতটা ঝুঁকিতে?

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতা হারানোর পর শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন এবং এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের—বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের—নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তোলে ভারত। বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় এসব অভিযোগ আরও জোরদার হয়।

সম্প্রতি সন্ত্রাসীদের গুলিতে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম সারির নেতা শরিফ ওসমান হাদি নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর প্রভাবে বাংলাদেশজুড়ে ব্যাপক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ভারতীয় কূটনৈতিক মিশনের আশপাশেও বিক্ষোভ দেখা যায়। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও সংবেদনশীল করে তোলে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে ভারতে বিক্ষোভ শুরু হয়। এমন প্রেক্ষাপটে দুই দেশই কূটনৈতিক পর্যায়ে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সংকটের সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক হলো—কূটনৈতিক ভাষার দ্বন্দ্ব ছাড়িয়ে পরিস্থিতি সরাসরি কূটনৈতিক স্থাপনা ঘিরে বিক্ষোভ ও সহিংসতার রূপ নেওয়া।

বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে। অপরদিকে ভারত নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায়। ভারত তাদের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা ও উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। পাশাপাশি ভিসা ও কনস্যুলার সেবা স্থগিতসহ একাধিক পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষকদের উদ্বেগও ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শ্যাম কুমার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বর্তমান সময়ে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক এখনো সরাসরি ভেঙে পড়ার পর্যায়ে না পৌঁছালেও এটি গভীর অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকলেও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন এই সম্পর্কে স্পষ্ট চাপ সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের সমর্থনের কারণে ভারতকে অতিমাত্রায় হস্তক্ষেপকারী শক্তি হিসেবে দেখা হয়েছে, বিশেষত সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রশ্নে। অনেকের মতে, ভারতের অব্যাহত সমর্থনই অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা সত্ত্বেও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সহায়ক হয়েছে। বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ হলো ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী গণম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার গঠিত হবে এবং ভারতের সঙ্গে কার্যকরভাবে সম্পর্ক পরিচালনা করতে পারবে। ভারতের জন্য যুক্তিসংগত অবস্থান হবে পরিস্থিতিকে কিছুটা স্থিত হতে দেওয়া, যখন যুবনেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক সংগঠনগুলো বিপ্লবোত্তর রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশ—উভয় দেশকেই এমন পক্ষগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, যারা এই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে চায়।

তার মতে, নয়াদিল্লিতে সংঘটিত এসব বিক্ষোভ কেবল বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়; বরং এর প্রভাব ভারত–বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপরও পড়তে পারে। তার ধারণা, সামনের দিনগুলোতে এই পরিস্থিতি দুই দেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

সিয়াম/আইএইচ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ভারত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর