এশিয়ায় তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:০৪
বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির শক্তিশালী হস্তক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। বৈশ্বিক গবেষণা ‘গ্লোবাল টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি ইনটারফেয়ারেন্স ইনডেক্স ২০২৫’ অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে খারাপ। বিশ্বব্যাপী ১০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৬তম।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীতে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৫ সালের সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১০০-এর মধ্যে ৬৯। স্কোর যত বেশি, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ তত বেশি— এমন মানদণ্ডে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে নেপালের অবস্থান ৪৩তম, ভারতের ৫৯তম, পাকিস্তানের ৫৪তম, শ্রীলঙ্কার ৪৫তম এবং মালদ্বীপের অবস্থান ৩৯তম। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ব্রুনাই (স্কোর ১৪) এবং সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে ডমিনিকান রিপাবলিক (স্কোর ৯৮)।
এই বৈশ্বিক গবেষণার বাংলাদেশ অংশ পরিচালনা করেছে প্রজ্ঞা। এতে এপ্রিল ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৫ সময়কালের উন্মুক্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ডব্লিউএইচওর এফসিটিসি (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল)-এর আর্টিক্যাল ৫.৩ গাইডলাইনের আলোকে সরকার কীভাবে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবিলা করেছে, তা মূল্যায়ন করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, আর্টিক্যাল ৫.৩-এর নির্দেশিকা গ্রহণের প্রায় দুই দশক পার হলেও বাংলাদেশে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সংক্রান্ত কোনো আচরণবিধি বা নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে তামাক কোম্পানিগুলো আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ, নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ, তথাকথিত করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের ভাবমূর্তি উন্নয়ন এবং আর্থিক ও নীতিগত সুবিধা আদায়ে সক্রিয় রয়েছে।
বিশেষ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ ঠেকাতে তামাক কোম্পানিগুলো লবিং, তথাকথিত গবেষণা প্রকাশ, গোলটেবিল বৈঠক, সংবাদ সম্মেলন, অনলাইন পিটিশন এবং গণমাধ্যমে প্রচারণাসহ নানা কৌশল অবলম্বন করেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। সরকারি পর্যায়ে তামাক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক ও যোগাযোগের তথ্য প্রকাশেও স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া বহুজাতিক তামাক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা এবং এসব প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় স্বার্থের সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে।
গবেষণার সুপারিশে বলা হয়, ডব্লিউএইচও এফসিটিসির আর্টিক্যাল ৫.৩ অনুসারে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য বাধ্যতামূলক আচরণবিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ দ্রুত চূড়ান্ত করা, নতুন তামাক কোম্পানি ও বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে নতুন তামাক কারখানার অনুমোদন না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে— এটি অত্যন্ত ভালো সংবাদ। এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। এ বিষয়ে আর কোনো হস্তক্ষেপ আমরা দেখতে চাই না।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গ্লোবাল সেন্টার ফর গুড গভর্নেন্স ইন টোব্যাকো কন্ট্রোলের হেড অব গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ড. মেরি আসুন্তা, বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সাবেক সমন্বয়কারী মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুসসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গণমাধ্যম, তামাকবিরোধী সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এসআইবি/এমএইচএস

