
রাজনীতিতে এক ধরনের নির্বাচনী হাওয়া বইছে। সরকারও নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায়। কয়েকদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি ক্লিয়ার করেছেন বলেই শেষ নয়, এর আগেও বিভিন্ন মহল থেকে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব আভাস পেয়েছেন, সেই সূত্র ধরেই ভোটের মাঠে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এখন রাজনৈতিক দলগুলোর।
এর মধ্যে উকিঝুঁকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগও। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আভাস দিচ্ছেন তারা। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকারটা যাতে লাভ করতে পারেন, সে দাবিও আছে তাদের। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে তাদের জোট রেডি। ১৬ বছর যাদের নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে, তারাও নির্বাসিত আওয়ামী লীগের মতো। ফলে ভোট করার ক্ষমতা পেলে তারাই থাকছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে, এটাই বাস্তবতা।
এদিকে, সহসাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ সূত্র ধরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকা ছাত্র ও ছাত্র নেতৃবৃন্দ নতুন প্ল্যাটফরম খোঁজার চেষ্টায় মত্ত। এরইমধ্যে নতুন করে আলোচনায়, জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতার নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। দল ঘোষণার আগে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
আর আগামী জুন মাসে পদত্যাগ করতে পারেন সরকারের আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। জানা গেছে, নতুন দল প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করবে। কমিটির সদস্য সচিব হতে যাচ্ছেন নাহিদ ইসলাম। ছাত্রদের নতুন দলের গঠনতন্ত্রের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর অল্পসময়ের মধ্যে গঠিত হয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। নানা চ্যালেঞ্জ ও সংস্কার কাজে সরকারকে সহায়তা করেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তবে পাঁচ মাসের মাথায় এই সরকারকে সংস্কার কাজে আর সময় দিতে চায় না বড় রাজনৈতিক দলগুলো। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে মাঠে নামছে।
তাদের লক্ষ্য গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের পথে রাখা। সমমনা দল ও জোটের নেতারা মনে করেন, এই সরকার জনগণের আন্দোলনের ফসল। জনগণ চায় প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন ব্যবস্থা করবে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের সংকট দূর করা সম্ভব নয়। তাই জনগণের নির্বাচিত সরকার এসে অন্যান্য সংস্কার প্রস্তাবগুলো ক্রমে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করবে।
সম্প্রতি সমমনা দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনই ছিল প্রধান ইস্যু। দ্রুততম সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। একই সঙ্গে ন্যূনতম সংস্কার শেষে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করারও দাবি নেতাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে মানববন্ধন, সেমিনার, এমনকি পদযাত্রাও হতে পারে। এই কর্মসূচিগুলো বিভাগীয় পর্যায়ে পালন করার কথা ভাবছে সমমনারা। জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্যই এই কর্মসূচি দেওয়া হবে। এই দাবিগুলো জনগণের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্যই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে সমমনা জোট এবং দলের অনেক নেতাকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে আসনভিত্তিক জোট নেতাদের সহযোগিতা করতে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দলটি। সমমনা নেতাকে গণসংযোগ এবং তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহায়তা করতে নির্বাচনী আসনের থানা, উপজেলা, পৌরসভার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই চিঠির অনুলিপি জোটের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতাদেরও দিয়েছে দলটি।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের আগে থেকেই ভালো বোঝাপড়া রয়েছে। আমরা মনে করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হওয়া উচিত। জনগণের নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংকট সমাধানের কোনো বিকল্প নেই। একটি অনির্বাচিত সরকার বেশিদিন দেশ চালাতে পারবে না, এ ছাড়া চালানো উচিতও নয়। তাহলে নতুন নতুন সংকটের সৃষ্টি হবে। এসব নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপিকে আহ্বান জানিয়েছি নির্বাচনকে দ্রুত করার জন্য যদি গণকর্মসূচি দেওয়া হয়; সেই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বলে আমরা কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করব।
নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, সদিচ্ছা থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না। সরকার ও দেশের জন্য এটা ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে কমিশন নির্বাচনের জন্য শতভাগ তৈরি হয়ে যেতে পারবে। তাহলে আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। এখন বাকিটা নির্ভর করছে সরকারের ওপর। তারা চাইলে জুলাই। আগস্টে নির্বাচন করা অসম্ভব নয়।
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হওয়া উচিত। জনগণের নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংকট সমাধানের কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে জামায়াত এগোচ্ছে দুটি টার্গেট নিয়ে— আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের মাঠে নামতে না দেওয়া ও বিএনপিকে প্রতিহত করে যতটা পারা যায় সফলতা ঘরে তোলা। দলটির মূল লক্ষ্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করা, সে জন্য এখন থেকে মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমত তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। সম্ভব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় দলীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।
দায়িত্বশীলরা বলছেন, নির্বাচনের ব্যাপারে জামায়াতের দুই ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। প্রথমত, জামায়াত নিজেরাই ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের সময় যখন আসবে, তখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করবে সেই পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এককভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে-তা এখনই বলার সুযোগ নেই।
বিকেপি/এটিআর