আন্দোলনে ত্যক্ত-বিরক্ত সবাই
বিপর্যস্ত জনজীবন, সরকারি কার্যক্রম ব্যাহত
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২১
-67a195dc66e70.jpg)
বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনরত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি : বাংলাদেশের খবর
নানামুখী দাবি আদায়ের জন্য দেশে যে ধরনের আন্দোলন-কর্মসূচি চলছে, এ রকম দুনিয়ায় আর কোথাও দেখা যায় না। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর দাবি-দাওয়া নিয়ে নানা পক্ষ আন্দোলন শুরু করে। একের পর এক আন্দোলনে একদিকে বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন, অন্যদিকে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় পিছিয়ে যাচ্ছে সরকারের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণের কাজগুলো।
যদিও সরকার বারবার বলছে, যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের অধিকার সবার রয়েছে। তবে জনগণকে জিম্মি করে যেন আন্দোলন করা না হয়। কিন্তু তাদের আহ্বানে ভ্রূক্ষেপ করছেন না আন্দোলনকারীরা। সবার মধ্যে যেন ধারণা গড়ে উঠেছে, সড়ক অবরোধ করলেই দাবি আদায় সহজ হবে। আর আন্দোলন ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
গত পাঁচ মাসে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকারসহ নানা দাবিতে শতাধিক আন্দোলন হয়েছে। এরপর সাত কলেজের শিক্ষার্থী, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক, চাকরিচ্যুত শিক্ষানবিশ এসআইসহ (পুলিশের উপপরিদর্শক) অনেকে বিক্ষোভ করেছেন। জানুয়ারি শেষ সপ্তাহে রেলকর্মীরা নিজেদের দাবি আদায়ে সারা দেশে ট্রেন চলাচলই বন্ধ করে দিয়ে বড় ধরনের দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন মহলের উত্থাপিত দাবিগুলো যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক, যা-ই হোক না কেন, দাবি আদায় করতে গিয়ে দেশের মানুষকে বিশেষ করে রাজধানীবাসীকে যেভাবে জিম্মি করা হচ্ছে, এটাও অন্য কোনো দেশে ঘটে না। যারা দাবি উত্থাপন করছেন, তারা রাস্তাঘাট দখল করে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন। এর ফলে নিত্যদিন সড়কে যানবাহন চলাচল এক ধরনের স্থবির হয়ে পড়ছে, সাধারণ কিংবা অসাধারণ-উভয় শ্রেণির নাগরিক চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ দিকটি দাবি উত্থাপনকারীরা কখনো ভেবে দেখেন বলে মনে হয় না। তদের মতে, দাবি আদায়ের আন্দোলন হবে, তবে সে জন্য অবশ্যই যৌক্তিক সময় ও পরিস্থিতি থাকতে হবে। নইলে দাবি আদায়ের নামে একটি নতুন সরকারকে চাপে রাখলে কোনো কাজই সফলভাবে সম্পন্ন হবে না।
নানামুখী দাবির মধ্যে কয়েক দফা দাবি নিয়ে রাজপথে নামেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। রোববার দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় রাজধানীর মিন্টো রোডে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে তারা অবস্থান নেন। এরপর দাবি পূরণের আশ্বাসের ভিত্তিতে রোববার দিনগত রাত ২টার দিকে গভীর রাতে হাসপাতালে ফিরে গেছেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ সাত দাবিতে শনিবার রাত থেকে বিক্ষোভ করছিলেন জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরা।
এদিকে, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গতকাল সোমবার মহাখালী-গুলশান লিংক রোড অবরোধ করে রাখেন। এই অবরোধের কারণে পুরো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, যা বিশেষ করে অসুস্থ ব্যক্তিদের, নারী যাত্রীদের এবং সাধারণ জনগণের জন্য বড় ধরনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক মানুষ তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারছিলেন না এবং মাঝপথে আটকে পড়ে হাঁটতে বাধ্য হন।
অন্যদিকে, মতিঝিলের রাস্তায় বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) ব্যানারে সমাবেশ করেন শেয়ারবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। গতকাল দুপুরে ১১টি দাবি নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরোনো ভবনের সামনে এই সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ তাৎক্ষণিক ১১টি দাবি জানান বিনিয়োগকারীরা। এদিকে বিনিয়োগকারীদের সমাবেশের দিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত।
বিকেপি/এমএইচএস