মুসলিমদের উৎসব সুনির্দিষ্ট, আরও উৎসব অন্বেষণ ভ্রষ্টতা

শায়খ মিযান হারুন
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৩০
-67ff87331c577.jpg)
পহেলা বৈশাখ উদযাপন মুসলিম জীবনচর্যার অংশ নয়। এটাকে বাঙালি মুসলমানের নিজস্ব সংস্কৃতি বলে বরণ করা সংগত নয়। স্থানীয় পোশাক, খাবার, খেলাধুলা বা সাধারণ সামাজিক আচার যদি ইসলামের অনুশাসনের বিরোধী না হয়, তবে তা অনুসরণে বাধা নেই। ইসলাম প্রাত্যহিক জীবনযাপনে এই প্রকার স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু কোনো বিশেষ দিবস বা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে জাতীয়ভাবে উৎসব পালনের ক্ষেত্রে ইসলামের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। মুসলিম উম্মাহর জন্য এই প্রকার বার্ষিক উৎসবের সংখ্যা দুটি– ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।
ইসলাম স্থানীয় খাদ্যাভ্যাস, পরিচ্ছদ বা রুচিবোধের বিষয়ে কঠোরতার পরিবর্তে দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক স্বাধীনতা প্রদান করেছে। বিশ্বের সকল মুসলমানকে আরবীয় ভাষায় কথা বলতে, আরবীয় পোশাক পরতে বা আরবীয় রীতিতে বিয়ে-শাদি সম্পন্ন করতে বাধ্য করেনি। কিন্তু উৎসব সংযোজনের প্রশ্নে ইসলাম সুস্পষ্ট সীমারেখা টেনে দিয়েছে। ইসলামে স্বীকৃত ঈদ দু’টো আরবীয় সংস্কৃতি বা কুরাইশ কিংবা মদীনাবাসীর স্থানীয় ঐতিহ্য নয়; বরং এটা ইসলামের নিজস্ব দান, সমগ্র মুসলিম জাহানের সার্বজনীন উৎসব। সুতরাং এতে সন্তুষ্ট না থেকে আরও উৎসবের অন্বেষণ বস্তুত ইসলামের গণ্ডি অতিক্রম করার প্রথম পদক্ষেপ।
প্রত্যেক মাসে নানা অজুহাতে উৎসবের সন্ধান ভোগবাদী মানসিকতার পরিচায়ক, যার প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে ইসলামের আগমন। অমুসলিম সম্প্রদায় থেকে মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাখাও মাকাসেদে শরীয়াহর গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। অতএব, ইসলাম গ্রহণের পরেও প্রতি মাসে উৎসবের সন্ধান করা, পশ্চিমা বা পৌত্তলিক সমাজের প্রতিটি উৎসবের বিকল্প অন্বেষণ বা সেগুলোকে ইসলামীকরণের প্রয়াস– এই সকলই ইসলামের মৌল চেতনা অনুধাবনে ব্যর্থতার লক্ষণ।
ইরানী জাতি পৃথিবীর বুকে এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। বিশ্বের মুসলমান সমাজের বৃহত্তর অংশ থেকে তারা অনেকাংশেই আলাদা। ইসলাম গ্রহণের পরেও তারা পূর্বপুরুষের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও চেতনার বলয় থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারেনি। বরং ইসলামকেই তারা নিজস্ব জাতিগত ও ঐতিহ্যিক ছাঁচে বদলে ফেলেছে। ফলস্বরূপ, ইরান-প্রভাবিত অঞ্চলসমূহের মুসলিম সমাজে যে সকল বিচ্যুতি ও অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে তার বৃহদাংশের দায়ভার তাদের ওপর।
নববর্ষ উদযাপনও সেই প্রকৃতিরই এক সংস্কৃতি, যার মূল প্রোথিত রয়েছে প্রাচীন পারস্যে, পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাসে। সম্রাট আলমগীর (রহমতুল্লাহি আলাইহি) সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে বিজ্ঞ আলিমগণের পরামর্শক্রমে নববর্ষ উদযাপন রহিত করেছিলেন। এই প্রথা পুনঃপ্রবর্তনের প্রচেষ্টা যেন না হয়। বাংলার মুসলমান সমাজ যেন ইরানকে কিবলা না বানায়। বাংলার আলিমরা যেন ইরানীদেরকে ইমাম না বানান- সেই প্রত্যাশা।
লেখক : ইসলামিক স্কলার
ডিআর/বিএইচ