-680e0a0b86029.jpg)
সাইফুল শেখ একজন কৃষক। তার বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর। তিনি মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার ভবের পাড়া এলাকার বাসিন্দা। চলতি বছরের ২৬ মার্চ নিজের পেঁয়াজ ক্ষেতে বিষপান করেন এবং পরদিন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অপরদিকে সিদ্দিক মল্লিক তিনিও একজন কৃষক। বয়স আনুমানিক ৪৬ বছর ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার বাসিন্দা। আম গাছের ডালে ফাঁস দিয়ে তিনি মারা যান। এই মৃত্যু দুটি কিন্তু স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এখানে মৃত্যু দুটি আত্মহত্যা। আর এর প্রধান কারণ হলো কৃষি কাজ পরিচালনার জন্য বা ফসল উৎপাদনের জন্য ঋণ নিয়ে সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে না পারা। পরিশোধ না করার প্রধান কারণ ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া।
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কৃষির সাথে জড়িত। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) এর প্রায় ১১-১২ শতাংশ কৃষি খাত থেকে আসে। দেশের ৩৫-৩৬ ভাগ শ্রমশক্তি এখনও কৃষি খাতে কর্মরত। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস কৃষি।
ধান, পাট, গম, ভুট্টা, চিনি ও তুলা এবং সবজি ও ফল বাংলাদেশের প্রধান কৃষি পণ্য। ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য যা তিন মৌসুমে চাষ হয়ে থাকে। যথা- আউশ, আমন ও বোরো। পাট হলো সোনালি আঁশ নামে বিখ্যাত। আর গম ধানের বিকল্প হিসেবে আগে ব্যবহৃত হতো। আর অন্যগুলো শিল্পে ব্যবহৃত, অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ এবং রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আমাদের দেশের কৃষকরা বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফসল উৎপাদন করে থাকেন। তারপরও তারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় না। কৃষি উপকরণ যেমন, সার, বীজ দাম বৃদ্ধি, কৃষকের ঋণের বোঝা, দারিদ্র্য, বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাসহ সেচের পানি সংকটের মধ্যেও তারা তাদের কৃষি কাজ পরিচালনা করে যান।
বাংলাদেশে প্রতিবছর অনেক কৃষক আত্মহত্যা করেন। আসলে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মহত্যা করেন না। তারা অনেক হতাশা ও দুশ্চিন্তা নিয়ে আত্মহত্যা করেন। সরকার যদি কৃষকদের জন্য সেচ পানি, সার ও কীটনাশক, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ, কৃষিপণ্য রপ্তানির সুবিধা, উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে তাহলে হয়ত এ মৃত্যু মিছিল থামানো সম্ভব।
আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষির প্রসার করা সম্ভব। জলবায়ু সহনশীল জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ করা সম্ভব। আর রপ্তানিমুখী কৃষিপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
কৃষকদের আত্মহত্যা রোধে ও কৃষিকাজ টিকিয়ে রাখতে সরকারকে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। আমাদের দেশে আখ শিল্প, পাট শিল্প, চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রাংশের ও অভিজ্ঞ লোকবল এবং সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে শিল্পগুলো আজ অকার্যকর হয়ে গেছে। যদিও আগে এসব শিল্প থেকে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত দেশ। কৃষকদের সহজ পদ্ধতিতে কৃষি ঋণ দিতে হবে। কৃষি অফিসের মাধ্যমে দিক নির্দেশনা দিতে হবে। পাশাপাশি তাদের সার, বীজ, কীটনাশক স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করতে হবে। আর সর্বোপরি তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
কৃষি খাত এখনো দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তবে এর আধুনিকায়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই বাঁচবে কৃষক আর কৃষি।
রিফাত আমিন রিয়ন : কলামিস্ট ও সংবাদকর্মী
- বাংলাদেশের খবরের মতামত বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkeditorial247@gmail.com
এমএইচএস