Logo

মতামত

নবজাতক জীবিত কিংবা মৃত উদ্ধারের ঘটনা ক্রমবর্ধমান

ডিএনএ ব্যাংক এখন সময়ের দাবি

Icon

অংকন তালুকদার

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১৭:০৫

ডিএনএ ব্যাংক এখন সময়ের দাবি

‘সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই একটি লাইন দিয়ে অনেক কিছুই বুঝিয়ে গিয়েছেন। যদিও আজকে আমরা প্রেম-ভালোবাসা নামক সংস্কৃতিটিকে খুবই খাটো করে দেখার চেষ্টা করছি। সত্যি ভালোবাসার মতো চিরবন্ধনের সম্পর্ক ইদানীং কেমন যেন ঠুনকো সম্পর্কে রূপ নিয়েছে। হঠাৎ করেই প্রেম হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যে আবার সেই সম্পর্ক রূপ নিচ্ছে বিয়েতে। কিন্তু সম্পর্ক টিকছে না বেশি দিন। অহরহ ঘটছে বিচ্ছেদের ঘটনা। যদিও প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিচ্ছেদের বৈজ্ঞানিক পরিমাপ করা কঠিন কাজ। তবে সম্পর্ক বিচ্ছেদের পেছনে অনেক কারণ থাকলেও পরকীয়া একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। 

মনোচিকিৎসায় একথা স্বীকৃত যে, বিচ্ছেদ, পরকীয়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এবং সামাজিক সম্পর্ক ও যোগাযোগে বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানসিক বিষণ্নতা ও আগ্রাসী মনোভাবের জন্ম দেয়। এছাড়া পারিবারিক ও দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতিতে পরকীয়া প্রভাব রাখে।

যদিও পরকীয়া নতুন কোনো বিষয় নয়। বর্তমানে মোবাইল ফোন, ফেসবুকসহ অনলাইনের নানা প্রযুক্তি মানুষের হাতের মুঠোয়, তাই আজকাল পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলা অনেক সহজ। ফলে  পুরুষ-নারী উভয়কেই পরকীয়ায় জড়িত থাকতে দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে যেসব সামাজিক ব্যাধি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পরকীয়া। এটিকে সামাজিক ব্যাধি না বলে ব্যক্তির চারিত্রিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের চরম রূপও বলা যায়। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই অহরহ শোনা যায় পরকীয়ার ঘটনা। আগে যৌতুক, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং অন্যতম সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয় ছিল এখনও আছে তবে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, নতুন নতুন আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ফলে এগুলোর তীব্রতা কিছুটা কমেছে। কিন্তু ইদানীং পরকীয়া মাথাচাড়া দিয়েছে দারুণ হতাশাজনকভাবে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে অনেক ক্ষেত্রে সংসারে ভাঙন অনিবার্য হয়ে পরছে। এমনকি কিছু মানুষ নিয়ে বসে ভুল এবং আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আর এই সব ভুল, সাময়িক মোহে আক্রান্ত ব্যক্তিরাই হয়ে উঠেছে সমাজের নিকৃষ্টতম মানুষের অংশ।

এদিকে কীভাবে এই সামাজিক রোগ পরকীয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তার উপায় খুঁজছে সুশীল সমাজ। 

আসলে যৌবনের চাহিদা সবার আছে। তবে অনেকে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, অনেকে পারে না। কিন্তু তার চেয়ে বড় বিষয় হল মানুষের অতিরিক্ত চাহিদা এবং মূল্যবোধের অভাব। মানুষের যদি নীতিবোধ থাকে তাহলে সে এমন কাজ কখনো করতে পারে না। তবে এই ব্যাধিটি নিতান্তই ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও গোপনীয় বিষয় হওয়ায় এটাকে রোধ করা যাচ্ছে না। আর এই পরকীয়ার নিষ্ঠুর বলি হচ্ছে প্রেমিকা-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, বাচ্চা এবং পুরো পরিবারে নেমে আসছে ভয়াবহ বিপর্যয়। কেননা পরকীয়ার ফলে ধাঁই ধাঁই করে বেড়ে চলেছে বিচ্ছেদ। যাতে করে শুধু ব্যক্তিই নয় বরং সম্পর্ক হুমকির মধ্যে পড়ছে প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্রের এবং মাতা ও সন্তানের। 

যদিও এ বিষয়ে সাংবাদিক, আইনবিদ, সমাজের প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা ও সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন।

পরকীয়া ব্যাধি নয়। এটিকে ব্যাধি বলা মানে এই ব্যাপারটি একপেশে ভাবে বিচার করা। পরকীয়ার কারণে কোন সাজানো ঘরই ভাঙ্গে না; ঘর অগোছালো হলেই পরকীয়ার জন্ম হয় এবং একসময় সেই অগোছালো ঘর ভেঙ্গেও যায়। প্রত্যেকটি পরকীয়ার পেছনে একটি সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে। এর ঝাঁঝ অতি মারাত্মক। মানবসমাজে এটি লঘু বা গুরুভাবে নেতিবাচক হিসেবে গণ্য। এর নেতিবাচক প্রভাবেই অজ্ঞাত পরিচয়ের নবজাতক জীবিত কিংবা মৃত উদ্ধারের ঘটনা ক্রমবর্ধমান। কখনও রাস্তাঘাট, কখনও ঝোপঝাড়, কখনও ফুটপাথ, কখনও বা ট্রেনের বগি, শৌচাগার বা নালা-নর্দমা, এমনকি ডাস্টবিনেও মিলছে সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতক। ময়লার ভাগাড়ে, ব্যাগে বন্দী অবস্থায় রাস্তার পাশে, ঝোপঝাড়, যানবাহন, খোলা মাঠ থেকে উদ্ধার হচ্ছে নবজাতক ও নবজাতকের লাশ। এসব নবজাতকের বেশিরভাগই গুরুতর আহত, না হয় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। যেসব শিশু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়, তাদের স্থান হয় নিঃসন্তান কোন দম্পতির পরিবারে, না হয় সরকারি শিশু আশ্রয় কেন্দ্রে। বড় হয়ে জানতেও পারে না তার জন্ম পরিচয়, কে তার বাবা, কে তার মা।

বিশ্বের সর্বোচ্চ নবজাতক মৃত্যু-কবলিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশে প্রতিবছর জন্মের পর মারা যায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার নবজাতক। এসব শিশুর মৃত্যু হয় জীবনের প্রথম মাসে এবং অর্ধেকই মারা যায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনই। বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অপরিণত অবস্থায় জন্ম, সংক্রমণ এবং ডেলিভারিকেন্দ্রিক জটিলতা থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি। কিন্তু এগুলো অনেক সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসে না। তাই এসব প্রাণহানির কারণ থেকে যায় অজানা। দেখা গেছে, ফেলে দেওয়ার পর যেসব নবজাতক ভাগ্যগুণে বেঁচে যায়, তাদের অনেকে নিঃসন্তান মা-বাবার কাছে আদরে বেড়ে উঠছে। সন্তান দত্তক নিতে উৎসুক বহু পরিবার। অন্যদিকে অনেকেই দায়িত্ব নিয়ে এসব শিশু লালনপালন করছে। যে কোন জায়গায় এসব শিশুদের ফেলে দেয়া হচ্ছে। ব্যাগে, বস্তায়, কাপড়ে মুড়িয়ে। কোনো শিশুর কান্না মানুষের কাছে পৌঁছালে ভাগ্যচক্রে বেঁচে যাচ্ছে। আর এসব ঘটনায় মামলা হলেও আসামি খুঁজে পাওয়া যায় না। 

শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ সন্তান জন্ম নিচ্ছে। পরে লোকলজ্জার ভয়ে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এই সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর তদন্তের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই বিয়ে বহির্ভূত অনেক ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে নারী-পুরুষ। ফলে এই নবজাতকদের জন্ম যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে জীবন্ত শিশুকে ফেলে দিয়ে যাওয়ার ঘটনাও। নবজাতকের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। তবে উদ্ধার হওয়া সব লাশের ময়নাতদন্ত হয় না। বেশিরভাগ রিপোর্টে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই হত্যার আলামত উল্লেখ করা হয়। এ শিশুগুলো সাধারণত প্রিম্যাচিউরড হয়। শরীরের টিস্যু বা হাড় সংগ্রহ করে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হলো ও  নবজাতকদের সঙ্গে ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করা আমাদের দেশে অসম্ভব। কারণ আমাদের ডিএনএ ব্যাংক নেই। এটি থাকলে অনেক অপরাধ কমে যেত। 

বলাবাহুল্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতক ও নবজাতকের লাশ পাওয়ার পর জন্মদাতা বা জন্মদাত্রীর খোঁজ করে এবং এই বিষয়ে মামলা করে পুলিশ। জীবিত নবজাতকদের দেওয়া হয় নিঃসন্তান পরিবার কিংবা সরকারি শিশু আশ্রয় কেন্দ্রে। মৃত নবজাতকের লাশের করানো হয় ময়নাতদন্ত। কিন্তু বাংলাদেশে উন্নত দেশের মতো ডিএনএ ব্যাংক নেই। এ কারণে ডিএনএ ম্যাচ করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই শেষ পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া মৃত নবজাতকদের জন্মদাতা বা জন্মদাত্রী অদৃশ্যই থেকে যায়। কল ৯৯৯-এ  নবজাতক উদ্ধার।

তথ্য বলছে, অজ্ঞাত পরিচয়ের মৃত নবজাতকের দেহ রাস্তা, ডাস্টবিন বা ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অবৈধ সম্পর্কের বলি হচ্ছে নিষ্পাপ শিশু। ফুটফুটে শিশুর হাসি দেখে নিষ্ঠুর মানুষের হৃদয়ও কোমল হয়ে ওঠে। লোকে এমনটাই জানে। মা-বাবা তাদের নবজাতক সন্তান কোলে নেয়ার সময় খুব আলতো করে ধরেন যাতে তার গায়ে সামান্য আঁচড়ও না পড়ে। কিন্তু মানব শিশুটিকে মানুষ নামের কিছু ‘নরপশু’ যখন হাসপাতালের বারান্দা, ধান খেত বা আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলে, তাকে কুকুর-বিড়ালের মুখে ঠেলে দেয়, নর্দমার ময়লায় ফেলে রাখে তখন গোটা মানবতাই লজ্জিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে নবজাতক শিশুদের হত্যা, আঁস্তাকুড় বা নর্দমায় ফেলে দেওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবৈধ সম্পর্কের ফসল হওয়ায় শিশুদের এ করুণ পরিণতির শিকার হতে হচ্ছে। 

মানুষ কেন পরকীয়া বা ব্যভিচার করে তার সুনির্দিষ্ট একটি কারণ লেখা সম্ভব নয়। তবে পারিবারিক কলহ. মনোমালিন্য, বিশ্বাসঘাতকতা (শুধু এই কারণে অধিকাংশ নারী পুরুষ পরকীয়ায় জড়ান), একঘেয়ে সম্পর্ক, অপূর্ণ প্রত্যাশা, আকর্ষণ হারিয়ে ফেলা, পুরোনো অভ্যাস, মনোদৈহিক ও সামাজিক কারণ, মানসিক সমস্যা, সঙ্গীর উদাসীনতা, পশ্চিমা সংস্কৃতি, শখ থেকে পরকীয়া, দূরত্ব ও শূন্যতা, সন্তান হওয়ার পর, কিছু বদভ্যাস, রাতে অসংলগ্ন আচরণ, ইচ্ছার মূল্য না দেওয়া, বারবার মুঠোফোনে নজরদারি ও চাহিদাকে গুরুত্ব না দেওয়া। যেমন সময়, ভালো আচরণ ও শারীরিক সম্পর্কে প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া। চাওয়া পাওয়ার প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া। তার মধ্যে হতে পারে  ভালো ব্যবহার না করা, শারীরিক সম্পর্কে অস্বীকৃতিসহ  যৌন কার্যে সাড়া না দেওয়া। এসব কারণ  নারী পরপুরুষ ও  পুরুষ পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। কেননা, একজন নারী কিংবা পুরুষ তার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দিয়ে তার প্রত্যাশা বা মনের চাহিদা পূরণ করতে না পারে তাহলে তার বিপরীত সে অন্য কাউকে খুঁজে নেয়।

পরকীয়ায় ‘সিরিয়াস’ সম্পর্ক কম ক্ষেত্রেই হয়। শতকরা ৫০ ভাগের বেশি পরকীয়া সম্পর্কের স্থায়িত্ব এক মাস থেকে এক বছর। এক বছরের বেশি হলে তা সর্বোচ্চ ১৫ মাস বা তার কিছু বেশি পর্যন্ত টেকসই হয়। শতকরা ৩০ ভাগ সম্পর্ক দুই বছর বা তার বেশি স্থায়ী হয়। পাঁচ ভাগের কম ক্ষেত্রে পরকীয়ার সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়। তবে এই সংখ্যা বাড়ছে। ছেলেরা বেশি কৌতূহলী। তাদের তুলনায় নারীরা অবশ্য পরকীয়ার কথা স্বীকার করেন কম। নিজের স্বামীকে লুকিয়ে পর পুরুষের সাথে প্রেম করেছেন, একথা তারা মোটেই প্রকাশ করতে চান না। যাহোক এসব বিকৃত মানসিকতা চরিতার্থের কোনো ন্যায্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকতে পারে না।

মূলত, যৌনতা এক ধরনের বিনোদন যা নারী পুরুষ সবাই পছন্দ করে কিন্তু বিশ্বস্ত না হলে জমে না!ভালোলাগা, ভালোবাসা—এই শব্দটির মধ্যেই এক ধরনের গভীরতা আছে। নিখাদ ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আসলে প্রয়োজন এক ধরনের নীরব বোঝাপড়া, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, এবং এমন এক সম্পর্ক যেখানে ভালোবাসা হবে নিঃস্বার্থ, নির্ভরযোগ্য এবং সময়ের সঙ্গে পরিণত। এটা কোনো একতরফা চেষ্টার ফল নয়, বরং একে গড়ে তুলতে হয় ধীরে ধীরে, আন্তরিকতা আর বিশ্বাস দিয়ে।

প্রথমেই দরকার, একজন মানুষ হিসেবে বুঝতে শেখা। অনেক সময় আমরা নিজেদের চাহিদা, আবেগ বা কল্পনায় হারিয়ে যাই এবং ভুলে যাই, সে-ও একজন স্বতন্ত্র মানুষ—যার অনুভব আছে, ভয় আছে, ব্যর্থতা আছে, আবার শক্তি ও সম্ভাবনাও আছে। যদি তুমি তাকে সত্যিকার অর্থে বুঝতে চাও, তাহলে শুধু তার ভালো দিক নয়, তার দুর্বলতাগুলোও আপন করে নিতে হবে। এই গ্রহণযোগ্যতা থেকেই গড়ে ওঠে এক ধরনের নিরাপত্তা—যা নিঃসংকোচে ভালোবাসা দিতে শেখায়। ভালোবাসার প্রথম শর্তই হলো আস্থা। তুমি যদি তার ওপর বিশ্বাস রাখো—তোমার চোখে যদি তার প্রতি নির্ভরতা থাকে—তবে সে তা অনুভব করবেই। একজন মানুষ তখনই খোলামেলা হয়, যখন সে বুঝতে পারে, তুমি তাকে বিচার করছো না, বরং তাকে বুঝতে চাচ্ছো। এই আস্থা আসলে ছোট ছোট কাজের মধ্যে প্রকাশ পায়—তার সিদ্ধান্তে সমর্থন, তার ব্যস্ততায় ধৈর্য, কিংবা তার কষ্টে পাশে থাকা। সে যখন দেখে তুমি কেবল তার আনন্দের সময় নয়, সংকটের সময়েও ঠিক পাশে আছো, তখন তার হৃদয়ে তোমার জায়গা হয় চিরস্থায়ী।

অন্যদিকে, ভালোবাসা পেতে হলে ভালোবাসা দিতেও জানতে হয়। প্রত্যেকেই চায় তার সঙ্গী তাকে প্রয়োজনবোধ করুক, প্রশংসা করুক, তার উপরে গর্ব বোধ করুক। তুমি যদি মাঝে মাঝে তাকে বোঝাতে পারো, তার অস্তিত্ব তোমার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ—তাহলে সে নিজেই তোমায় আগলে রাখবে হৃদয়ের গভীরে। পুরুষেরা হয়ত সব সময় মুখে অনুভব প্রকাশ করে না, কিন্তু তারা অনুভব করে—তোমার চোখে, আচরণে, শব্দে—তুমি কেমন করে তাকে ভালোবাসো। তবে এর মানে এই নয় যে নিজেকে হারিয়ে দিতে হবে। একজন যখন নিজেকে ভালোবাসে, নিজের স্বপ্নকে সম্মান করে এবং নিজের জীবনে লক্ষ্য রাখে, তখন সে অন্যের চোখে হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণা। আর একজন পুরুষ যখন দেখে তার সঙ্গী নিজের অস্তিত্ব নিয়েও সচেতন, তখন সে তাকে ভালোবাসে আরও গভীরভাবে, কারণ সে জানে—এ কেবল ভালোবাসতে জানে না, ভালোবাসার মূল্যও বোঝে। সবশেষে, সম্পর্ক মানেই শুধুই ভালো সময়ের সঙ্গী হওয়া নয়—বরং একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, শেখা, ভুল করা এবং একে অপরকে বদলে নেওয়া। নিখাদ ভালোবাসা কোনো জাদু নয়, এটা তৈরি হয় সময় নিয়ে, ধৈর্য নিয়ে, এবং প্রতিদিন একটু একটু করে।

জানি ভোগের রাজ্যে বিবেক কাজ করে না। মূল্যবোধের অভাব এবং নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সুস্থ বিবেকবান সচেতন মানুষরা। একবার এই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তা থেকে মুক্ত হওয়া সহজ কাজ নয়। তারপরও যারা এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। অনেকেই আবার এ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে সুখী জীবনে ফিরে যেতে চাইছেন। কিন্তু পারছেন না। সেক্ষেত্রে পরকীয়া রোধে সৃষ্টিকর্তার ভয় অন্তরে রাখুন। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন। কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধ সমাজে অপরাধ কমিয়ে আনে এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক হয়। প্রায় সব দেশেই পরকীয়া সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য আচরণ। কোন কোন দেশে একে রীতিমতো অপরাধ বলেই মনে করা হয়। পাশ্চাত্য আধুনিক সমাজে এর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বজায় থাকলেও এটি আইনত অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না, তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরকীয়াকারী ব্যক্তির বিবাহিত সঙ্গী তার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য কোর্টে আবেদন করতে পারেন। তবে ইসলামি রাষ্ট্রসমূহে এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, যা হল পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড প্রদান।

লেখকের পরামর্শ—উপর্যুক্ত বিষয়ে কেউ যদি মনঃকষ্ট পান তাহলে শুরুতেই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কারণ যে কোনো লেখা যদি পাঠক সামগ্রিক দিক বিবেচনায় না নিয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা করে বা নিজের গায়ে নিয়ে নেয় তবে সেটা কারোর জন্য সুখকর নয় না লেখকের না পাঠকের। তাই নিরপেক্ষ ও চিন্তার খোরাক জেনে লেখাটি পাঠ করার অনুরোধ রইলো। তাতে উভয়েরই মঙ্গল ও কল্যাণকর। নিজের জীবনের প্রতি মনোযোগী হোন। সম্পর্ক আরও মজবুত করে তুলুন। অচেনা কারো প্রতি আকর্ষণ বোধ করার পিছনে ছোটবেলায় বহিঃজগতের সঙ্গে পর্যাপ্ত সম্পর্ক তৈরি না হওয়াই দায়ী। এছাড়া জীবনের একঘেয়েমি তো রয়েছেই। সুখী এবং সুস্থ জীবনের জন্য বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের হাতছানি এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন পরকীয়া কোনো সুস্থ সমাজের অংশ নয়। শুধু লম্পট, অসচ্চরিত্র, বহুগামী নারী-পুরুষই এতে উল্লসিত হবে।

অংকন তালুকদার : কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ

  • বাংলাদেশের খবরের মতামত বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkeditorial247@gmail.com

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর