-(1)-6817505f9d0bd.jpg)
দেড় দশকের বেশি সময় ধরে দেশের প্রায় সব স্কুল-কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছেন বিগত সরকারদলীয় নেতা ও সমর্থকরা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শীর্ষ ও মধ্যম সারির এসব নেতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়নে বহুমুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। ইচ্ছেমতো নিয়োগ দিয়েছিলেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের। সেইসঙ্গে দলীয়প্রধানের স্বপ্নপূরণে মেধা-মননে আধুনিক, চিন্তা-চেতনায় প্রাগ্রসর সুশিক্ষিত জাতি গঠনে নিজেদের উৎসর্গও করেছিলেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের মাধ্যমে মূলত তারা আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন প্রজন্মের মাধ্যমে দারিদ্রমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন।
টানা তিন দফায় সরকার পরিচালনাকালে দলীয় নেতারা সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পেয়ে গিয়েছিলেন জেন-জি নামের নতুন এক প্রজন্ম। যাদের জন্ম, বেড়ে ওঠাসহ মস্তিষ্কের ব্লু-প্নিন্টও (নীলনকশা) তৈরি হয় তাদের শাসনামলে। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে দলটির অবিস্মরণীয় অবদানকে সেই প্রজন্মের চেতনার গভীরে গেঁথে দিতে পাঠ্যক্রমে দফায় দফায় পরিবর্তনও আনা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, দলীয়প্রধানের শিক্ষাউন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সব স্কুল-কলেজের নেতৃত্ব হাতে নিয়ে নেতারা পরম মমতা আর আদর-যত্নে জেন-জিদের দলীয় বয়ানে সমৃদ্ধও করেছিলেন।
তবে বাস্তবক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে প্রবীণ রাজনৈতিক দলের প্রধানসহ নেতাদের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। স্কুল-কলেজ থেকে নেতারা বিপুল অর্থ-কড়ি উপার্জন করলেও শেষ অবধি ভয়ংকর এক পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। জেন-জিদের নেতৃত্বে গড়ে তোলা রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিস্ময়করভাবে পতন হয়েছে সরকারের। দলীয়প্রধানসহ দলে দলে নেতাদের দেশ ছাড়তে হয়েছে। আর যারা দেশ ছাড়তে পারেননি তাদেরও থাকতে হয়েছে আত্মগোপনে। সোজা কথায় রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্বের হুমকিতে পড়তে হয়েছে দলটিকে।
নিজেদের হাতে গড়ে তোলা প্রজন্মের এমন উল্টো আচরণের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, দেশের শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে দলীয়প্রধানের ভাষ্যের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিলেন স্থানীয় নেতারা।জাতীয় ও বৈশ্বিক নানা সমীক্ষার প্রতিবেদন ঘাঁটলে দেখা যায়, শিক্ষা ও জ্ঞানসূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশ কোনোভাবেই এগিয়ে যেতে পারেনি। শিক্ষার মানে যেমন বরাবরই তলানীতে, তেমনি গবেষণা ও উদ্ভাবনেও অনেক দরিদ্র দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। শিক্ষাখাতে ব্যয়ও অনেক গরীব দেশের চেয়ে কম।
জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেস্কো) মতে, যেকোনো দেশে জিডিপির ৬ শতাংশ যেখানে শিক্ষাখাতে ব্যয় করার কথা, সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ১.৮৩ শতাংশ। ফলে দেশের নতুন প্রজন্মকে বিশ্ববাজারে সক্ষম মানবসম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকারের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল ছিল না। শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে সব সময়ই পেছনের সারিতে থেকে গেছে সরকার। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গিয়ে শিক্ষার গুণ-মানে।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, টানা তিন দফায় নেতৃত্বে থাকা স্থানীয় নেতারা শিক্ষার উন্নয়নে কোনো ভূমিকা না রেখে উল্টো স্কুল-কলেজে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ করেছেন।যাতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, শিক্ষার মানের চেয়ে অবকাঠামোতেই নজর বেশি ছিল নেতাদের। যিনি যত বেশি প্রকল্প পাস ও জনবল বাড়িয়েছেন স্কুল-কলেজে তিনি তত বেশি যোগ্য বলে প্রশংসিত হয়েছেন। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল-কলেজে শুধু চোখ ধাঁধানো সুউচ্চ অবকাঠামো আর বিপুল জনবলের উৎসবমুখরতাই দৃশ্যমান হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভাষ্য ও স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের অন্যসব খাতের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও প্রকল্প মানেই বিপুল অর্থের লুটপাট। জনবল নিয়োগ মানেই লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক কোনো কর্মসূচি মানেই বড় বড় খরচের ফর্দ, তহবিলের অপচয়, হিসাবের ফাঁকফোকর গলে বাড়তি অর্থ সভাপতি বা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের ব্যক্তিগত খরচের খাতায় উঠে যাওয়া। এসবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানপ্রধান আর সভাপতির ব্যক্তিগত ভাগ্যের চাকাই শুধু অস্বাভাবিকভাবে বার বার গতিশীল হয়েছে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, বিগত কয়েক দশকে যতবারই গ্রামে গিয়েছি, ততবারই গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে দুর্নীতি আর অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ শুনেছি। ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতৃত্বে সব সময়েই দেখেছি উপজেলার কোনো মধ্যম সারির নেতাকে। যার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের প্রাণের কোনো যোগ নেই। স্কুলভবন, ক্লাসরুম, ইউনিফর্ম, চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ তৈরি ছাড়াও জনবল নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয়ে সেই সভাপতি যতটা মনোযোগী, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের আধুনিক ধারায় দক্ষ, যোগ্য করার ক্ষেত্রে ততটাই উদাসীন।।শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ আর দলীয় স্বার্থের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইতিহাসও নেই তাদের।
এমন চিত্র একটিমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা এলাকার একাধিক প্রতিষ্ঠানেরই নয়, সারা দেশেরই বাস্তবতা। অভিযোগ রয়েছে, সরকারদলীয় নেতারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী জ্ঞান ও প্রযুক্তিমুখী করার বদলে টাকার খনিতে পরিণত করেছিলেন। রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে গণহারে নিয়োগবাণিজ্য করেছেন।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দক্ষতা, যোগ্যতা বিচার না করে কাড়ি কাড়ি টাকার বিনিময়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চাকরি বেচে দিয়েছেন।শুধু সেখানেই থেমে থাকেন নি, ভর্তি ও পরীক্ষা ফি বাড়ানোসহ বিভিন্ন অজুহাতে হরেক রকমের অর্থ আদায় করে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দীর্ঘশ্বাসের কারণও হয়েছেন অনেকে।
আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভাপতিসহ অন্য সদস্যরা কলঙ্কিত ইতিহাসও তৈরি করেছেন। কোমলমতি ছাত্রীদের ব্যবহার করে যৌন শোষণের মতো জঘন্যতম অপরাধেও জড়িয়েছেন কেউ কেউ। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে সেসব ঘটনা ধামাচাপাও দিয়েছেন। যারাই এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাদেরই মুখ বন্ধ করা হয়েছে, ক্ষতি করা হয়েছে। রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গভর্নিং বডির সভাপতি ও দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ যার বড় এক দৃষ্টান্ত। যিনি ছাত্রীর সঙ্গে অসম সম্পর্কে জড়িয়ে, বিয়ে করে কলঙ্কিত ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। যেখানে তাকে সহযোগিতা করেছেন স্বয়ং প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
জাতি গঠনের কারখানা হিসেবে স্বীকৃত স্কুল-কলেজের নেতৃত্বে এমন নীতি ও চরিত্রহীন ব্যক্তিদের আশকারাতেই স্থানীয় বখাটে নেতাকর্মী, কিশোর গ্যাং আর উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-যুবকরা বেপরোয়াভাবে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের মানসিক নির্যাতনসহ যৌন হয়রানির মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন। যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে বহু অভিভাবককে। শিক্ষাবিমুখ, নীতিহীন অথচ ক্ষমতাধর অনেক নেতার কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তদারকি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন বহু অবসরপ্রাপ্ত দক্ষ শিক্ষক, শিক্ষানুরাগী ও শিক্ষাসেবকরা। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা থেকে ছিটকে পড়েছেন অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণী।
শুধু অযাচিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভালো পরিবেশ তৈরি থেকে পিছিয়ে এসেছেন স্থানীয় পর্যায়ের বহু শিক্ষাবিদ। এমনকি এলাকার অরাজনৈতিক তরুণরাও স্কুল-কলেজে শিক্ষাবিষয়ক বিতর্কসহ ভালো কাজের আয়োজন করতে গিয়ে বিতাড়িত হতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে শিক্ষার মান বিপজ্জনকহারে নিম্নগামী হয়েছে। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে দক্ষতাসম্পন্ন মেধাবীদের বদলে শিক্ষাঙ্গণ অনবরত উৎপাদন করে গেছে সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষার্থীদের।
বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গণহারে দলীয়করণের মধ্য দিয়ে নেতা ও সমর্থকরা গত দেড় দশকে যতটা সুবিধা নিয়েছিল, পরিণামে তার চেয়ে বেশি খেসারত দিতে হয়েছে। কারণ টাকা বানানোর কারখানায় পরিণত করা সেসব স্কুল-কলেজ থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থী তথা জেন-জিদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা রক্তক্ষয়ী জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিগত সরকারের অবিশ্বাস্য পতন ঘটিয়েছে। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন সরকারপ্রধানসহ দলের প্রায় সব বড় নেতা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দলীয়করণে দেশপ্রেমহীন, স্বার্থপর, শিক্ষাবিমুখদের মাধ্যমে লুটপাট চালালে পরিণতি কী হতে পারে, সেটা বিগত সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া দল ও তাদের বুদ্ধিজীবীরা এখন অবধি বুঝতে সক্ষম না হলেও শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত। কারণ, রাজনীতির ইতিহাসে রক্তাক্ষরে লেখা জুলাই গণঅভ্যুত্থান যে প্রজন্মের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে তারা সরকারদলীয় নেতাদের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষা নিয়েছে, তাদেরই বয়ান মুখস্ত করেছে, গুণগানও করেছে বছরের পর বছর। তাদের শিক্ষার সেই মূল্যবোধের এমন উল্টোচিত্র বিশেষজ্ঞদের কাছে সত্যিই অবিশ্বাস্য, বিস্ময়কর।
অবশ্য, স্কুল-কলেজের নেতৃত্বে থাকা নেতারাই যে নিজেদের অজান্তে সরকারের বিপক্ষে আত্মঘাতী আচরণ করেছিলেন তা-ই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির নামে যে ভয়ংকর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছিল তারও পরিণতি মূলত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান। বিগত সরকার নতুন প্রজন্মের মস্তিষ্কে যেসব বয়ান গেঁথে দিয়েছিল তা একেবারেই উল্টো ফল দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে দেশের শিক্ষাখাতে সরকার যেসব ইতিবাচক সূচক অর্জন করেছিল, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ঘিরে যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল, বাস্তবে সেসব কোনো কাজেই আসেনি।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে প্রভাবশালী নেতারা যেমন দেশ ছেড়েছেন, তেমনি স্কুল-কলেজের কমিটি থেকেও উধাও হয়ে গেছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের এমন হঠাৎ শূন্যতায় অতিউৎসাহী হয়ে ওঠেন জুলাইয়ে বিজয়ী সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। ফলে গণঅভ্যুত্থানের সাড়ে তিন মাস পর গেল বছরের ১৭ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্কুল-কলেজের আগের ব্যবস্থাপনা কমিটি স্থগিত করে অ্যাডহক কমিটি গঠনে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যার দায়িত্ব দেওয়া হয় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের। প্রজ্ঞাপনে অ্যাডহক কমিটি গঠনের ছয় মাসের মধ্যে নিয়মিত কমিটি গঠন করতে বলা হয়।
যদিও প্রজ্ঞাপন জারির আগে থেকেই ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়। তুমুল প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন নেতা ও সমর্থকরা। বিগত সরকারের শাসনামলের মতো এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অপসারণের দাবি তুলেছেন। এ নিয়ে গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) সংবাদ সম্মেলন করা হয়। যেখানে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগসহ বিগত সরকারের সময়ে নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্তদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনাসহ শিক্ষকদের বহিষ্কার দাবিও করেন।
এদিকে, গত ২৭ এপ্রিল হঠাৎ এক আদেশে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নিয়মিত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের কার্যক্রম স্থগিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আদেশে বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে বা হবে, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব কমিটির মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। কোনো ঘোষণা ছাড়া এমন আদেশে নানামুখী আলোচনার জন্ম হয়। তবে অনেকের ভাষ্য, নিয়মিত কমিটির সভাপতির যোগ্যতা নির্ধারণ না হওয়ায় সংশোধনের জন্যই এমন জরুরি আদেশ এসেছে।
অবশ্য, নিয়মিত কমিটি গঠনের কার্যক্রম থামানো হলেও দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি দখলের কার্যক্রম থমছে না। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে বিগতরা পালিয়ে যাওয়ায় ময়দান এখন পুরোপুরি ফাঁকা। এমন পরিস্থিতিতে অযোগ্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের চাকরি বাতিলের মাধ্যমে নতুন পদ সৃষ্টি করতে পারলে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। সেই সঙ্গে স্কুল-কলেজে সোনার ডিম পাড়া হাঁসের প্রকল্প পাস করতে পারলেই শুধু ‘মধু আর মধু’! এমনটাই ভাবছেন অনেকে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে অভিভাবক ফোরামের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে কোনো বা মাথাব্যথা নেই। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের ভাষ্য, স্কুল-কলেজ পরিচালনার বেলায় দলীয় নেতাদের মনোযোগ শিক্ষার চেয়ে উন্নয়ন প্রকল্পেই বেশি থাকে। ফলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে তারা বেশি অবদান রাখতে পারেন না। যে কারণে স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষা ও বিদ্যানুরাগী, প্রাক্তন শিক্ষক, শিক্ষাবিদদেরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে রাখা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
অভিভাবকদের মতামত হচ্ছে, স্কুল-কলেজকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে পারলে সরকার পরিচালনাকারী দলের জন্যই বেশি মঙ্গল। তাতে শিক্ষার মান ও গুণ দুটোই বাড়বে। অবশ্য, এতসব উপদেশ শোনার সময় নেই রাজনৈতিক নেতা ও ব্যক্তিদের। তারা আগের সরকারদলীয় নেতাদের মতোই মধুকর হয়ে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধু আহরণে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছেন। কারণ তারা বুঝতে পারছেন না, মধুতে গোপনে বিষ মেশানো শিখে গেছে আজকের নতুন প্রজন্ম!
লেখক : সাংবাদিক
- বাংলাদেশের খবরের মতামত বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkeditorial247@gmail.com
এমএইচএস