Logo

মতামত

অপরিচিত অ্যাপে ঋণ : ফাঁদে পড়ছেন না তো?

Icon

রিয়াজুল হক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ২১:৩২

অপরিচিত অ্যাপে ঋণ : ফাঁদে পড়ছেন না তো?

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে আমাদের জীবন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি প্রতারণার ধরনও হয়ে উঠেছে আরো চতুর ও প্রযুক্তিনির্ভর। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনলাইন লোন বা ডিজিটাল ঋণ প্রদানকারী অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। ‘কিছু ক্লিকেই নগদ টাকা’, ‘ঘণ্টায় লোন’, ‘কোনো জামানত নয়’—এমন নানা প্রলোভন দেখিয়ে এরা আকৃষ্ট করছে সাধারণ মানুষকে। অথচ এই সহজলভ্য ঋণ যে কতটা ভয়াবহ ফাঁদ হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতায় দিনে দিনে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

অনলাইন ঋণ মূলত একটি অ্যাপভিত্তিক সেবা যেখানে ব্যবহারকারী খুব সহজেই কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ঋণ হিসেবে পেতে পারেন। সাধারণত অ্যাপটি মোবাইল ফোনে ইন্সটল করার পর ব্যবহারকারীর ফোনের কনট্যাক্ট লিস্ট, গ্যালারি, মেসেজ এবং লোকেশনসহ নানা ব্যক্তিগত তথ্যের অনুমতি চেয়ে নেয়। এখানেই শুরু হয় বিপদের। একবার এই তথ্যগুলো তাদের হাতে গেলে, ঋণ পরিশোধে সামান্য দেরি হলেই তারা শুরু করে মানসিক নির্যাতন, যেমন ফোন দিয়ে হয়রানি, পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের কাছে অপমানজনক বার্তা পাঠানো, এমনকি সামাজিক মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করার হুমকি দেওয়া।

প্রলুব্ধকারী বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই এই অ্যাপে প্রবেশ করেন। কেউ হয়ত ব্যবসায় সাময়িক চাপ সামাল দিতে চান, কেউ পারিবারিক জরুরি প্রয়োজন মেটাতে চান। শুরুতে ৫,০০০ বা ১০,০০০ টাকার লোন পাওয়া গেলেও পরিশোধের সময় আসে ৭ দিন বা ১৪ দিনের মধ্যে, আর সুদের হার ৩০% থেকে ৫০% পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লুকানো চার্জ, সার্ভিস ফি বা দেরির জরিমানা এমনভাবে সংযুক্ত থাকে, যা গ্রাহককে এক রকম ঋণের দাসত্বের মধ্যে ফেলে দেয়।

এই অ্যাপগুলো কেবল অর্থনৈতিক শোষণই নয়, বরং মানসিক নির্যাতনের এক ভয়ানক চিত্র তৈরি করছে। এমনকি কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন এই চাপে। এসব অ্যাপের অনেকগুলোর মূল কার্যালয় দেশের বাইরে, ফলে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

এখন প্রশ্ন হলো, আমরা এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে সাবধান হতে পারি?

প্রথমত, কোনো লোন অ্যাপ ব্যবহার করার আগে নিশ্চিত হতে হবে এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত কিনা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে অনুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা রয়েছে। সেখানে না থাকলে সেটি ব্যবহার করা উচিত না।

দ্বিতীয়ত, মোবাইল অ্যাপ ইন্সটল করার সময় কোন কোন তথ্যের অনুমতি চাওয়া হচ্ছে, তা সতর্কভাবে খেয়াল করতে হবে। একটি সাধারণ লোন অ্যাপের কেন আপনার কনট্যাক্ট লিস্ট বা ছবি দেখার প্রয়োজন হবে? 

তৃতীয়ত, যদি অর্থনৈতিক চাপে পড়েন, তবে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করুন, স্থানীয় কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করুন। সরকার অনুমোদিত অনেক এমএফআই বা এনজিও আছে যারা স্বল্প সুদে ঋণ দেয়। অজানা বা বেনামি অ্যাপের দিকে ঝুঁকে নিজের মানসিক শান্তি ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিপন্ন করবেন না।

আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করার জন্য, বিপদ ডেকে আনার জন্য নয়। সুতরাং অপরিচিত অ্যাপের ঋণের ফাঁদ থেকে সাবধান হোন, সচেতন হোন এবং একইসাথে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করুন।

রিয়াজুল হক : যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর