
রাজনৈতিক দলের ন্যারেটিভ কখনও কখনও এতটাই শক্তিশালী হতে পারে যে, দেশ, রাষ্ট্র, সরকার আর দলের সীমারেখা মুছে দিতে পারে। তখন ব্যক্তির বিশুদ্ধ দেশপ্রেম ভাবনাও দলীয়প্রেমের ফাঁদে পড়তে পারে। ব্ল্যাকহোল চরিত্রের এমন দলীয় ন্যারেটিভ গ্রাস করতে পারে লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী এমনকি সংবাদকর্মীদের কমনসেন্সও।
বছরের পর বছর ধরে কমনসেন্স হারানোর এমন চর্চায় সংবাদকর্মীরা শেষ অবধি মননে-মগজে দলীয়কর্মী-ই হয়ে ওঠেন। ফেসবুকে দারুণভাবে সক্রিয় সংবাদকর্মীদের নিউজফিডে চোখ রাখলেই যার প্রমাণ পাবেন।যারা দেশের চোখে দল মাপার কমনসেন্স হারিয়ে দলের চোখে দেশ দেখেন।
অথচ বিস্ময়কর হচ্ছে, দলীয় ন্যারেটিভ ফেরি করে বেড়ানো সংবাদকর্মীরা বুঝতেই পারেন না তারা ‘কমনসেন্স’ হারিয়েছেন। রাজনীতির বাইনারিতে আটকে বিশেষ ন্যারেটিভের পক্ষে সম্মতি উৎপাদনে ‘শিশু বা পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নন’ জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করছেন।
মূলত, কোনো দেশ বা রাষ্ট্রকে অপারেট করার জন্য রাজনৈতিক দল অপরিহার্য হলেও কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠী দেশের চেয়ে বড় বা সমান হতে পারে না। ফলে ন্যারেটিভে বুঁদ হয়ে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ খ্যাত সংবাদমাধ্যমকে সেই দলের প্রচারযন্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা কমনসেন্সের ঘাটতিই বলা যায়।
সাংবাদিকদের কমনসেন্স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জনপ্রিয় ফ্যাক্ট চেকার কদরুদ্দিন শিশির। একটি আলোচিত ঘটনায় পত্রিকাগুলোর নিউজট্রিটমেন্ট বিষয়ে তিনি পোস্ট করেছেন, “দেশি সাংবাদিকদের মধ্যে ‘কমনসেন্স’ ও ‘গুড ইনটেনশন’ এর ঘাটতি যে আছে তা আর গোপনীয় বিষয় নয়। আরেক পোস্টে লিখেছেন, “এই অশিক্ষিতরাই বাংলাদেশের সাংবাদিক। ”
সহজ করে বুঝলে, দলীয় ন্যারেটিভে বুঁদ হওয়া সাংবাদিকদেরই তিনি অশিক্ষিত বলেছেন। যাদের ‘কমনসেন্স’ ও ‘গুড ইনটেনশনে’ ঘাটতি আছে। সত্য হচ্ছে, অন্ধ দলপ্রেম কখনও দেশপ্রেম জাগায় না। দলীয়প্রেমের বাইরে এসে যতটা শক্তভাবে রাজনীতিকে প্রশ্ন করা যায়, জবাবদিহিতায় আনা যায়, ভেতরে থেকে ততটা নয়। ফলে একমাত্র দলপ্রেমহীন সংবাদকর্মীরাই ভালো সাংবাদিক হয়ে উঠতে পারেন।
এই লেখাটি যেসব সংবাদকর্মী পড়ছেন তারা যদি লেখকের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে চিন্তিত হয়ে পড়েন, তাহলে ধরে নেবেন, আপনি রাজনীতির বাইনারির ফাঁদে আটকে আছেন। ক্ষমতার জন্য যারা জনগণের ক্ষতি করতেও দ্বিধা করে না তাদের প্রতি আপনার মুগ্ধতা রয়েছে। আপনার কমনসেন্স নড়বড়ে। সংবাদ লেখার ক্ষেত্রে ন্যারেটিভের ফিল্টারে বার বার আটকে যেতে পারেন।
(সাংবাদিকতার পরিবেশ দিবস : ৫ জুন, ২০২৫। এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা)
লেখক : সাংবাদিক
- বাংলাদেশের খবরের মতামত বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkeditorial247@gmail.com