-6873a94958f71.jpg)
প্রতীকী ছবি (এআই দিয়ে তৈরি)
মুজিব-জিয়া বিতর্কের উর্ধ্বে নন। এমনকি পৃথিবীর কোনো মানুষই বিতর্কের উর্ধ্বে নন। কিন্তু তাদের জীবনের ৮০ ভাগ পজিটিভিটি আমরা সসম্মানে গ্রহণ করি। মুজিব একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন আর মেজর জিয়া শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।
জিয়া সসম্মানে শেখ মুজিবকে দেশের ফাউন্ডিং ফাদার মানতেন। এবং জীবদ্দশায় স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আলগা আদিখ্যেতা করতেন না। মুজিবকে অবদলিত করবার পর যেভাবে জিয়াকে অসম্মান করা হলো এতে করে হয়ত The anti-Liberation forces of 1971 were able to satiate their vengeance. কিন্তু বাংলাদেশের সহাবস্থানের রাজনীতি পুরোদস্তুর বিনষ্ট হলো। এর খেসারত অসম্মানকারীদেরও দিতে হবে বৈকি। এই আধুনিক যুগে মাইনাস টু ফর্মুলা আপামর জনসাধারণকে গেলানো কঠিন হবে। বিএনপি বা আওয়ামী লীগের ভোটার দেশ থেকে উধাও হয়ে গেছে -এটা ভুল ধারণা।
দুইদিনের বিচিত্র ও বহুমুখী ঘটনার পূর্বাপর দেখে যেটা অনুভব করলাম সেটি হলো, আগের জুলাইতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবদল একাট্টা ছিল। আর চলতি জুলাইতে বিএনপির বিরুদ্ধে সবাই একজোট হওয়ার ভাণ ধরেছে। বিস্ময়কর সত্য হলো যে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পোক্ত করবার নামে জামায়াতের রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে নিজেদের সরকারের অংশীদারিত্বও দিয়েছিল খালেদা জিয়ার বিএনপি। অথচ সেই জামায়াত আজকে এন্টি বিএনপি। সাথে যোগ দিয়েছে এনসিপি ও অপরাপর দল। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সুসংহত রাখতে বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিরোধিতা থাকবে এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু অ্যাটিচ্যুড যদি মধ্যযুগীয় বিভীষিকা মনে করায় সেটি বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। সভ্যতা-ভব্যতা এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকলে, ন্যূনতম শিষ্টাচার না দেখালে দেশে বিশুদ্ধ রাজনীতি কখনোই ফিরবে না।
১৯৭১ সালে জামায়াত লিডার গোলাম আজম পাকিস্তানের নাগরিক ছিলেন এবং সজ্ঞানে ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন। ওই গোলাম আজমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭৮ সালে তিনি গোলাম আজমের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করেন।
গোলাম আজমের শিষ্যরা আজকে যদি জিয়াউর রহমানের পোর্ট্রেট পদদলিত করে সেটি ইতিহাসের প্রতি চরম অকৃতজ্ঞতা দেখানো ছাড়া আর কিছুই হয় না।
অপরদিকে জিয়া অসম্মানিত হওয়ায় অনেক আওয়ামী লীগারদের মধ্যে একধরনের বন্য তৃপ্তি দেখতে পাচ্ছি। হুম, তোমরা ৩২ ভাঙারিদের পক্ষে ছিলে, এখন কেমন লাগছে? এটা একেবারেই পাড়ার কলতলার মতো ঝগড়ার বয়ান হয়ে গেল। মুজিবকে অসম্মান করা হচ্ছে বলে জিয়াকে অসম্মানিত করে পাল্টা নিতে হবে -এটি অর্বাচীনতা ও বালখিল্যতা। আপনি যদি অপদস্তকারীর সাথে নিজেদের মহানুভবতা দিয়ে বিভেদরেখা টানতে না পারেন -তবে আপনার মনুষ্যজীবন বৃথা।
আমরা সবাইকে মানুষ হয়ে উঠবার সাধনায় মনোনিবেশ করতে বলব। বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের পাঠটা যথার্থভাবে নিতে বলবে। আপনি যদি বিশুদ্ধ পথ ও মতে ব্রতচারী না হন রাজনীতিতে আপনার কানাকড়িও দাম নাই। বাংলাদেশের ইতিহাসে মুজিব-জিয়ার বাইরে কেউকেটা হয়ে যাওয়ার মতো পলিটিশায়ান এখনো আসেনি। সামনে আসলে তাদেরকে দাঁড়িয়ে টুপিখোলা স্যালুট দানাবো। আপাতত নিজেদের অবস্থান ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে ধীরস্থির থাকুন। বেপরোয়া হলে শেষাবধি দিশা হারাবেন।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী
- বাংলাদেশের খবরের মতামত বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkeditorial247@gmail.com