Logo

মতামত

বাংলাদেশে ডিপ স্টেট এখনও কার্যকর : একটি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব

Icon

আবদুল্লা রফিক

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৭:৩৩

বাংলাদেশে ডিপ স্টেট এখনও কার্যকর : একটি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব

বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে মাইনাস করার চেষ্টা দৃশ্যমান। তবে এর জন্য বিএনপির নিজের দায়ও কম নয়। এত বড় জনসমর্থিত একটি দল যদি মিনমিন করে কথা বলে, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। গলা উঁচিয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে কথা বলার মতো এখন দলে কেউ নেই। বিএনপির বর্তমান প্রধান নেতা তারেক রহমানের দেশে ফিরে দলের হাল ধরা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি দেশে ফিরলে কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হবে এবং চলমান দলে যেসব অনিয়ম চলছে, তারাই উঁচু গলায় প্রতিবাদ করবে।

আওয়ামী লীগ তো অনেক আগেই সরকারের সফল প্রচেষ্টায় মাঠ থেকে বিতাড়িত হয়েছে।

আমার কেন জানি মনে হচ্ছে—বাংলাদেশে মার্কিন ডিপ স্টেট এখনও সক্রিয়। এই ষড়যন্ত্রতত্ত্বের পেছনে যুক্তি হিসেবে আমি দেখতে পাচ্ছি—

  • বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির অস্থিরতা,
  • আইনশৃঙ্খলার অবনতি,
  • জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর তৎপরতা,
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় ‘মব কালচারের’ অপতৎপরতা,
  • মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা,
  • জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়া,
  • এবং অতি বিপ্লবীদের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা।

তার সঙ্গে আরও জোরালোভাবে দেখা যাচ্ছে সাংবাদিকদের ভয়ের সংস্কৃতি।

এখন তো ভাবতেই হচ্ছে—ড. ইউনূস ত্রিশ/চল্লিশ কোটি টাকা খরচ করে লন্ডনে যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল বিএনপির বর্তমান নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে তার মুখ বন্ধ করা। কারণ, লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে একান্ত বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, আমরা জানি না—হয়তো কোনোদিন জানবও না।

বাংলাদেশে মাঠপর্যায়ে বিএনপি নেতাদের অতি উৎপাত ও চাঁদাবাজি দলকে কোনঠাসা করে ফেলেছে। এর পেছনেও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের অবস্থান একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ব্যাপক জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও বিএনপির সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন দলের প্রধান নেতৃত্বের দেশের বাইরে থাকা। ওই যে, বলছিলাম—ডিপ স্টেট এখনও চালু থাকতে পারে!

২০০৬ সালে যখন ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়, তখন শোনা যেত—ডিপ স্টেট কার্যকর। সেই সময় তৎকালীন সরকার বুঝতে পেরেছিল যে, বাংলাদেশের ৭০-৮০ শতাংশ সাধারণ মানুষ বড় দুই দলের দুই নেত্রীর প্রতি আনুগত্যশীল। তাই তারা ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ কার্যকর করার চেষ্টা করেছিল এবং মার্কিনপন্থী কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করেছিল।

তাদের ধারণা ছিল—দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে পারলে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন দল একক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ক্ষমতায় চলে যাবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। কিছুদিনের মধ্যেই ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন-ইউনূস বুঝে গেলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ড. ইউনূসের নেতৃত্বকে মেনে নেবে না। ফলে ড. ইউনূস রাজনীতি থেকে ছিটকে গেলেন। এরপরের ঘটনা প্রবাহ আমরা সবাই জানি।

এখন এটা স্পষ্ট—বিএনপিকে মাঠ থেকে সরানোর জোরালো চেষ্টা চলমান। আওয়ামী লীগ তো আগেই বিতাড়িত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ধরে নেওয়া যেতে পারে, ডিপ স্টেট এখনো সক্রিয়। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু আগেই বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরিতে তৎপর।

উদাহরণস্বরূপ— 

  • সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সাধারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে, যেখানে একসময় জমজমাট পর্যটন ব্যবসা ছিল।
  • গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রাধান্য,
  • বোয়িং বিমানের ক্রয়,
  • রোহিঙ্গাদের জন্য করিডোর,
  • চট্টগ্রাম বন্দরকে মার্কিনপন্থী বিদেশি কোম্পানির কাছে দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেওয়া।

‘ইউনূস সরকার’ যদি বিএনপিকে মাইনাস করতে সক্ষম হয়, তাহলে বাংলাদেশ চলে যাবে উগ্র মৌলবাদ সমর্থিত অতি বিপ্লবীদের হাতে—যা হবে দেশের জন্য এবং সাধারণ জনগণের জন্য ভয়ংকর একটি অধ্যায়। তখন সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের গতি হবে উল্টো পথে, তাও আবার দ্রুত গতিতে।

আবদুল্লা রফিক : প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ-কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরি

  • বাংলাদেশের খবরের মতামত বিভাগে লেখা পাঠান এই মেইলে- bkeditorial247@gmail.com

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর