Logo

মতামত

বুকে পাথর চেপে শেখ হাসিনার আরও একটি ‘১৫ আগস্ট’

ওয়াসিম খান রানা

ওয়াসিম খান রানা

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১৮:১০

বুকে পাথর চেপে শেখ হাসিনার আরও একটি ‘১৫ আগস্ট’

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ আগস্ট এক গভীর বেদনাবিধুর  দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। 

সেই থেকে দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে দেশবাসী। টানা ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দিনটিকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে পালন করেছেন। 

তার আমলে ১৫ আগস্টে দেশজুড়ে কালো ব্যাজ ধারণ, শোকসভা, মিলাদ মাহফিল, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন-সবই ছিল বাধ্যতামূলক। এমনকি এদিনে কারও জন্মদিন বা ব্যক্তিগত উৎসব প্রকাশ্যে উদযাপন করাও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না।

কিন্তু ২৪ এর ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট প্রথমবারের মত দেশের বাইরে কাটাতে হয়েছে তাকে। এর মাঝে কেটে গেছে আরো একটি বছর। 

ফলে ২০২৫ সালের ১৫ আগস্টও ভারতে কাটাতে হচ্ছে শেখ হাসিনাকে। তবে এবার সেখানকার পরিস্থিতি তার জন্য হয়ে উঠেছে ভিন্নরকম কষ্টকর। কারণ তিনি বর্তমানে যে দেশে অবস্থান করছেন, সেখানে ১৫ আগস্টই স্বাধীনতা দিবস। এদিন চারপাশে সাজসজ্জা, পতাকা উত্তোলন, প্যারেড, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আতশবাজি-সব মিলিয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। 

যেখানে বাংলাদেশে ১৫ আগস্ট মানে শোক, সেখানে নতুন পরিবেশে তা পরিণত হয়েছে উল্লাসের দিনে। এই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি শেখ হাসিনার জন্য মানসিকভাবে আরও বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছে।

প্রবাস জীবনের নিঃসঙ্গতার সঙ্গে এ দিনের মানসিক চাপ তাকে আরও একা করে দিয়েছে। একসময় চারপাশে যাদের ভিড় ছিল-দলীয় নেতাকর্মী, ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী, কূটনীতিক-এখন তারা নেই। দীর্ঘদিনের মিত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও এই বিশেষ দিনে দেখা বা যোগাযোগ হয়নি বলে জানা গেছে। ফলে তার একাকিত্বের অনুভূতি আরও গভীর হয়েছে। 

শেখ হাসিনার জন্য ১৫ আগস্ট শুধু রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত আবেগের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। এটি তার পরিবারের সবচেয়ে বড় ক্ষতির দিন। ১৯৭৫ সালের সেই ভয়াল রাতের স্মৃতি ও শোক তিনি প্রতি বছর রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রবাসে, অপরিচিত পরিবেশে এবং চারপাশের আনন্দময় আবহে সেই শোক এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।

এ অবস্থায় শেখ হাসিনার মনে হতে পারে, জীবনের এক দীর্ঘ অধ্যায় তিনি পেছনে ফেলে এসেছেন-যেখানে তিনি ছিলেন ক্ষমতায়, দলের নেতৃত্বে, দেশের শীর্ষস্থানে। 

কিন্তু আজ তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতাহীন, প্রবাস জীবনের অনিশ্চয়তায় আবদ্ধ, আর শোক দিবস পালনেও বাধাগ্রস্ত। এই মানসিক চাপ কেবল রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত একাকিত্বের সঙ্গেও জড়িত।

এছাড়া শোক, নিঃসঙ্গতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা-এই তিনের সমন্বয় হয়ত তাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে নিজের ভবিষ্যৎ, দল এবং দেশের রাজনীতিতে তার সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে। 

লেখক, গণমাধ্যমকর্মী, দৈনিক বাংলাদেশের খবর

  • এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

শেখ মুজিবুর রহমান শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর