Logo

মতামত

নন-লাইফ বীমা খাতের উন্নয়ন বিষয়ক কিছু ভাবনা

Icon

আহমেদ সাইফুদ্দীন চৌধুরী

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৫৭

নন-লাইফ বীমা খাতের উন্নয়ন বিষয়ক কিছু ভাবনা

নন-লাইফ বীমা খাতে সামনের দিনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর উন্নয়নে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা নন-লাইফ বীমার অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। যেমন—নির্ধারিত এজেন্ট কমিশনের বাইরে অতিরিক্ত কমিশন প্রদান এবং বিশ্ববীমা বাজারের তুলনায় আমাদের প্রিমিয়াম হার অনেক বেশি।

তাছাড়া, নন-লাইফ বীমা খাতে ব্যবসা সংগ্রহে এজেন্ট প্রথা বিলুপ্ত করা প্রয়োজন। এজেন্টদের পরিবর্তে সেই খরচ মার্কেটিং এক্সিকিউটিভদের পিছনে ব্যয় করা উচিত।

অন্যদিকে, নন-লাইফ বীমা খাতে পণ্যেরও কিছু স্বল্পতা রয়েছে। পরিধি বিস্তারের জন্য বীমাকৃত খাতগুলো চিহ্নিত করে তা বাধ্যতামূলক করা জরুরি।

বীমা শিল্পের পরিধি বাড়াতে হলে নন-লাইফ বীমা খাতের নিয়ম ও নীতিমালা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। সবাই মিলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে বীমা খাত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।

সরকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা কর্পোরেশন শতভাগ সরকারি ব্যবসার আন্ডাররাইট করবে। বর্তমানে ৫০ শতাংশ সরকারি ব্যবসা বেসরকারি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির মধ্যে বণ্টন করা হয়। এই হার সমানভাবে না দিয়ে পুরোটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দিলে খাতটির আরও উন্নতি সম্ভব হবে।

নন-লাইফ বীমা শিল্পে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশে নন-ট্যারিফ মার্কেট চালু করা সময়োপযোগী হবে। কারণ, ট্যারিফ মার্কেটে প্রিমিয়ামের হার বিশ্ববাজারের তুলনায় অনেক বেশি। এর ফলে অতিরিক্ত কমিশন প্রদানের প্রবণতা তৈরি হয়। নন-ট্যারিফ মার্কেট চালু হলে আমরা বৈশ্বিক বীমা সেবার সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক সেবা দিতে সক্ষম হবো। এতে নন-লাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

পুনঃবীমার ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ৫০ শতাংশ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে এবং বাকী ৫০ শতাংশ বিদেশি বাজারে করতে হয়। এটি পরিবর্তন করে ৩০ শতাংশ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে এবং ৭০ শতাংশ বিদেশি বাজারে করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তবে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিকল্প রাখা উচিত, যাতে কোনো কোম্পানি চাইলে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন অথবা বিদেশি পুনঃবীমাকারীর সঙ্গে পুনঃবীমা করতে পারে।

যে কোনো নন-লাইফ বীমার নতুন পণ্য উদ্ভাবনকারী কোম্পানিকে প্রথমে বাজারজাত করার সুযোগ দিতে হবে। যদি সেটি সফল হয়, তবে পরীক্ষামূলক সময় শেষে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নেওয়া যাবে। এতে নিয়মকানুনের কিছুটা শিথিলতা আসবে এবং বিভিন্ন কোম্পানি নতুন পণ্য উদ্ভাবনে উৎসাহিত হবে।

মূলত বীমা দাবি যে কোনো নন-লাইফ বীমা কোম্পানির সক্ষমতা পরিমাপের প্রধান মানদণ্ড। তাই দাবি নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায় যেসব তথ্য-নথি জমা দিতে হয়, তা সহজীকরণ করা একান্ত প্রয়োজন এবং তা করা সম্ভব।

নন-লাইফ বীমা কোম্পানির প্রিমিয়াম পরিশোধ পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা জরুরি। বর্তমানে প্রিমিয়াম পরিশোধের পরদিনই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা শিথিল করে অন্তত এক মাস সময় দেওয়া উচিত। এক মাসের মধ্যে পরিশোধ না হলে প্রতিদিনের জন্য ১% হারে বা উপযুক্ত আর্থিক জরিমানা আরোপ করা যেতে পারে।

যদি কোনো কোম্পানি এক মাসের মধ্যে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, তবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্টেকহোল্ডাররা এগিয়ে এলে নন-লাইফ বীমা খাতকে আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ করা সম্ভব। এতে গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে, সঠিক বীমা কভারেজ নিতে আগ্রহ বাড়বে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে।

লেখক : মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ জেনারেল ইনসিওরেন্স কোম্পানি পিএলসি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর