Logo

মতামত

সহজ লাভের স্বপ্নে সঞ্চয় হারানোর গল্প

Icon

রিয়াজুল হক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৮

সহজ লাভের স্বপ্নে সঞ্চয় হারানোর গল্প

এক অনুমোদনহীন, বেনামি, নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান থেকে খবর এলো—  ‘প্রতি লাখ টাকায় মাসে চার হাজার টাকা লাভ!’

এই প্রলোভনময় প্রস্তাব শুনে আপনি প্রথমে খানিকটা সন্দেহ করলেও, মনে মনে ভাবলেন— ‘এক লাখ টাকা দিয়েই দেখি, কী হয়!’

আপনি প্রথমে এক লাখ টাকা সেখানে জমা দিলেন। প্রথম মাসেই লাখ টাকার বিপরীতে চার হাজার টাকা পেলেন। দ্বিতীয় মাসেও পেলেন একই পরিমাণ। তৃতীয় মাসেও। 

আপনি খুশিতে আত্মহারা। কারণ এমন লাভ তো কেউ দেয় না! ভেবে নিলেন, এ যেন ভাগ্য পরিবর্তনের কেবল সূচনামাত্র।

লাভের পরিমাণ বেশি পাবার আশায়, অন্যান্য জায়গায় যেসব টাকা রাখা ছিল, সেখান থেকে সব এনে ১০ লাখ টাকা জমা দিলেন। পরের মাসে চল্লিশ হাজার টাকা লাভ পেলেন। তারপরের মাসে আবার চল্লিশ হাজার টাকা। কী শান্তি! অটোমেটিক টাকা আসে।

কয়েকমাস পর দেখা গেল, সেই প্রতিষ্ঠানের আর খোঁজ নাই। নামধারী সেই অফিসে বড় তালা ঝুলছে। ফোন কেউ ধরছে না। যে মানুষগুলো এতদিন মিষ্টি করে কথা বলত, এখন সব লাপাত্তা।

এবার আপনি আপনার সেই সারাজীবনের সঞ্চয় দশ লাখ টাকা উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন মানুষ ধরলেন। কেউ কেউ আশ্বাস দিল, ‘আমার চেনা পুলিশ আছে, ব্যাংকের লোক আছে, আইনজীবী আছে।’ 

যাদেরকে ধরলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাও আবার ধুরন্দর। টাকা উদ্ধারের কথা বলে আপনার কাছ থেকে কয়েকদিন পরপর দুই/ পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া শুরু করল। ছয় মাস পর দেখলেন, এভাবেও লাখ টাকার উপরে হাওয়া হয়ে গেছে। এই টাকা কিন্তু আপনি আবার চাইতে পারবেন না। কারণ যাদেরকে টাকা দিয়েছেন, তারা তো আপনার টাকা উদ্ধারের জন্যই বিভিন্ন প্রয়োজনের নাম করে টাকা নিয়েছেন।

স্বাভাবিকভাবেই এভাবে টাকা উদ্ধার হবে না। এরপর নতুন কারো পরামর্শে আদালতে থানায় অভিযোগ দিলেন। আদালতে মামলা করলেন। সেখানেও উকিল খরচ, কাগজপত্রের খরচ, মামলা খরচ চলতেই থাকলো। দিনও পেরিয়ে যেতে লাগলো। নিজের কাজকর্ম ফেলে এভাবে মানুষের পিছনে, মামলার পিছনে সময় নষ্ট হতে থাকলো। আর আপনার দীর্ঘদিনের দুশ্চিন্তা, শ্রমের কথা উহ্য রাখলাম।

ধরুন, আপনার মতো আরও পাঁচ হাজার মানুষ‌ অগাধ লাভের লোভে  যে যেভাবে পেরেছে, টাকা জমা রেখেছে।

ফলাফল? সবার একই পরিণতি। কারও লাখ টাকা গেছে, কারও কোটি টাকা।

শেষে সবাই বলছে— ‘আমরা তো সহজ-সরল মানুষ, প্রতারিত হয়েছি!’

কিন্তু সত্যি কি তাই? সহজ-সরল, নাকি অতি লোভী?

প্রতারকেরা চতুর, এতে সন্দেহ নেই। তারা মানুষের লোভ, অজ্ঞানতা এবং সহজে ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে কাজে লাগায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ‘আমরা কি সত্যিই প্রতারিত হয়েছি, নাকি নিজের লোভের ফাঁদে নিজেরাই আটকা পড়েছি?’

যে প্রস্তাব শুনলেই মনে হয়, ‘এটা তো অসম্ভব’, সেটাই যদি সত্যি বলে বিশ্বাস করি, তাহলে দোষ কার?

লোভ মানুষের প্রকৃত শত্রু। এটা মানুষকে যুক্তিহীন করে তোলে, অন্ধ করে ফেলে। আজকের দিনে যখন প্রতারণা প্রযুক্তির মতো দ্রুত বাড়ছে, তখন সচেতন হওয়াই একমাত্র প্রতিরোধ।

কারণ, আপনি যদি লোভের ফাঁদে পা বাড়ান, তাহলে যা আছে, তাও হারাতে হবে।

লেখক : যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর