Logo

মতামত

বাংলাদেশের খবর

প্রত্যয়ের আলো সময়ের সঙ্গী

Icon

রহমান মৃধা

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩০

প্রত্যয়ের আলো সময়ের সঙ্গী

একটি পত্রিকার ইতিহাস শুধু ছাপার অক্ষরে নয়, তার প্রাণ লুকিয়ে থাকে পাঠকের বিশ্বাস ও লেখকের নিবেদনেই। সেই বিশ্বাস ও দায়িত্ববোধের প্রতীক হয়ে আজও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের খবর- বাংলা সাংবাদিকতার এক নির্ভরযোগ্য আলোকবর্তিকা।

বহু বছর ধরে দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, সামাজিক পরিবর্তন ও মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে যে পত্রিকাটি নির্ভীকভাবে লিখে চলেছে, সেটিই আজ পাঠকের মনে স্থান করে নিয়েছে বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে। আমি নিজেও এই পত্রিকার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে লেখক হিসেবে যুক্ত থাকতে পেরে এক গভীর সম্পর্ক অনুভব করি। আমার অনেক চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও জাতীয় ভাবনা প্রথম আলোর মতো স্থান পেয়েছে এই পত্রিকার পাতায়- যা আমার কাছে শুধু একটি প্রকাশনা নয়, বরং এক মমতাময় পরিবার।

পত্রিকাটি প্রায় এক যুগ ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি রাজনীতিসহ নানা খাতে।

বিশেষ করে বর্তমান সময়ে প্রাইমারি শিক্ষাকে নিয়ে বিশেষ আয়োজন পত্রিকাটিকে ভিন্ন আঙ্গিকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার এই অঙ্গনে অন্য দৈনিকগুলো নজর না দিলেও বাংলাদেশের খবর অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তাদের এই উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিতও হচ্ছে।

প্রাইমারির ছোট ছোট বাচ্চাদের আঁকাআঁকি, সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশ গুরুত্ব পাচ্ছে প্রাইমারি শিক্ষা বিষয়ক এ পাতায়। এই প্রাঙ্গণে শিক্ষকরাও লেখালেখি করে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছেন। শিক্ষাকে নানা আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করার সুযোগ পাচ্ছেন মেধাবী শিক্ষকরা, তারা শুধু লিখছেনই না, সঙ্গে প্রতিভাচর্চা করার সুযোগ পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে আগে যে প্রাইমারি শিক্ষা অঙ্গনে দুরবস্থার চিত্রটি ফুটে উঠতো, সেই চিত্রগুলো তুলে ধরে ব্যতিক্রমী পন্থায় সেটা এখন পরিপূর্ণতা পাচ্ছে।

আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয়, মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ে আগে তেমন লেখালেখি হতো না। বিশেষ করে কওমি মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা পিছিয়ে ছিল মিডিয়ার আলো থেকে। বাংলাদেশের খবর এই ধারাটিকে এগিয়ে নিতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটাও একধরনের বড় পদক্ষেপ বলে দাবি করা যায়। এর মাধ্যমে কওমি শিক্ষাধারার পিছিয়ে থাকা তরুণসমাজ আয়-রোজগারের মূলধারায় মিশে যেতে প্রেরণা পাবে। ইহজাগতিক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মর্যাদার সঙ্গে সমাজে মিশে ধর্মীয় দায়িত্বও পালন করে যেতে পারবে।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষাঙ্গনের এই শাখাটিকেও বাংলাদেশের খবর এগিয়ে নিয়ে আসছে লেখালেখির মাধ্যমে। শিক্ষাব্যবস্থার পিছিয়ে পড়া এই দুই ধারাটিকে প্রাধান্য দেয়ায় বাংলাদেশের খবর প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। এ তৎপরতা অব্যাহত থাকলে এই পত্রিকাটিকে পাঠকসমাজ চিনবে ভিন্ন পথে, নতুন রূপে। সবার প্রত্যাশা- এই আলো যেন আরো উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে দেশ ও জাতির মাঝে।

ডিজিটাল যুগে সংবাদ জগৎ যেমন দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তেমনি টিকে থাকার লড়াইও হচ্ছে কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশের খবর প্রমাণ করেছে- যেখানে সততা, পাঠকের আস্থা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে, সেখানে স্থায়িত্বের শক্তিও জন্ম নেয়। এই পত্রিকা কেবল খবর প্রকাশ করে না; এটি এক চিন্তার ধারক, আলোচনার অনুঘটক এবং নতুন প্রজন্মের জন্য এক নৈতিক দিকনির্দেশনা। প্রবাসে বসেও আমি অনুভব করি, এই পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যা যেন দেশের হৃদস্পন্দনের প্রতিধ্বনি। সম্পাদকীয় থেকে শুরু করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন- সবখানেই দেখি একদল মানুষ সত্যকে তুলে ধরার সংগ্রামে অটল। তাদের সেই নিরবচ্ছিন্ন নিষ্ঠা আমাদের প্রেরণা দেয়, আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী তাই কেবল একটি সময়চিহ্ন নয়, বরং এক আত্মপ্রত্যয়ের উৎসব। এর পেছনে আছে অসংখ্য অদেখা পরিশ্রম, অগণিত প্রেরণার গল্প। সম্পাদক, সহকর্মী, সাংবাদিক, প্রযুক্তিবিদ আর সবচেয়ে বড় পাঠক ও লেখক সমাজের সম্মিলিত যাত্রাই গড়ে তুলেছে বাংলাদেশের খবর-এর এই অনন্য পথচলা। ভবিষ্যতের পথে এই পত্রিকা যেন আরও প্রাসঙ্গিক, আরও প্রাণবন্ত ও বিশ্লেষণধর্মী হয়ে ওঠে- এই আমার প্রার্থনা। তথ্য বিভ্রান্তির ভিড়ে যেন এটি থাকে সত্য ও প্রজ্ঞার বাতিঘর হয়ে। 

এই বিশেষ দিনে আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের খবর-এর সম্পাদনা পরিষদ, মোবারক হোসেন ভাইসহ সমগ্র টিমকে- যাদের দায়বদ্ধতা ও ভালোবাসায় এই প্রতিষ্ঠান আজ এক মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছে। দূর পরবাস থেকে আমার শুভেচ্ছা- বাংলাদেশের খবর আরও আলোকিত হোক, আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠুক এবং যুগের পর যুগ পাঠকের মনে সত্য ও বিবেকের প্রতীক হয়ে থাকুক।

লেখক : গবেষক ও কলাম লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।
ইমেইল : Rahman.Mridha@gmail.com

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বাংলাদেশের খবর

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর