Logo

মতামত

দ্বৈত নীতি : পারসোনালিটি থেকে বেয়াদবি

Icon

রিয়াজুল হক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০:৩৩

দ্বৈত নীতি : পারসোনালিটি থেকে বেয়াদবি

প্রতীকী ছবি

চাকরির দিনগুলোতে অফিসে আপনি ছিলেন ‘স্যার’। আপনার কণ্ঠস্বর একটু উঁচু হলে সেটাকে বলা হতো ‘পারসোনালিটি’। অধস্তনরা কুঁকড়ে যেয়েও বলত, ‘স্যার একটু স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড!’

একই আপনি, অবসরের পরে হঠাৎই বদলে গেলেন। আজ সেই অফিসে নতুন প্রজন্মের কর্মীরা আপনার সঙ্গে একটু দৃঢ়ভাবে কথা বললেই আপনি বলছেন, ‘এই যুগের ছেলেমেয়েরা কোনো সম্মান জানে না! বেয়াদব একটা প্রজন্ম!’

এটাই আমাদের অফিস সংস্কৃতির এক নির্মম বাস্তবতা। চেয়ারে থাকলে বদমেজাজও হয়ে যায় ‘পারসোনালিটি’। আবার চেয়ার হারালে সেই একই আচরণ হয়ে যায় ‘বেয়াদবি’।

মূলত মানুষের চরিত্র অনেক সময় নির্ভর করে তার অবস্থানের ওপর। যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ ‘চেয়ার’-এর মালিক, ততক্ষণ তার কঠিন কথাও গ্রহণযোগ্য। অধস্তনরা তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, মাথা নোয়ায়, হাসে, তোষামদ করে। কারণ, সে মুহূর্তে ‘স্যার’-এর মেজাজই অফিসের নীতি।

কিন্তু একদিন যখন তিনি অবসর নেন, চেয়ারটি আর তার থাকে না। তখন সেই একই ব্যক্তি, একই কণ্ঠে কথা বললে, মানুষ ভাবে, ‘বয়স হয়েছে, এখনো আগের মতো রাগারাগি মানায় নাকি!’ অর্থাৎ, মানুষ নয়, অবস্থানই নির্ধারণ করে কার রাগটা গ্রহণযোগ্য, আর কারটা বেয়াদবি।

চাকরি করলে অবসরের সময় তো আসবেই, তা আপনি যত বড় কর্মকর্তাই হোন না কেন। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর ধরে যিনি প্রতিদিন মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন, হঠাৎ একদিন সকালবেলা উঠে দেখেন, কেউ আর তার নির্দেশ শোনে না। ফোন নীরব, ফাইল নেই, অফিসের গাড়ি নেই। শুধু আয়নায় দেখা যায় একা এক ‘স্যার’, যার নির্দেশের এখন কোনো মূল্য নেই। নিজের বাজারের ব্যাগ নিজেকেই টেনে বেরোতে হয়। এই হঠাৎ শূন্যতা থেকেই অনেকের মধ্যে জন্ম নেয় রাগ, হতাশা, তিক্ততা। তখনই দেখা যায়, আগে যারা বদমেজাজকে ‘কুইক ডিসিশন টেকার’ বলতেন, তারা এখন অধস্তনদের একই স্বভাবকে বলছেন অভদ্রতা, বেয়াদবি।

একসময় আপনি আপনার বদমেজাজকে মনে করতেন পারসোনালিটি। আজ অন্যের কথাকে বলছেন বেয়াদবি। এই দ্বিচারিতা শুধু কর্মজীবনের নয়, পুরো সমাজের প্রতিচ্ছবি।

আমরা শিখিনি, সম্মান কণ্ঠের ভলিউমে নয়, মনোভাবে নির্ধারিত হয়। আর মনে রাখা দরকার, আত্মসংযম হলো প্রকৃত পারসোনালিটি। কারণ আত্মসংযমী মানুষের নিজের ওপর কর্তৃত্ব থাকে। যে মানুষ রেগে গিয়েও চুপ থাকতে পারে, অন্যায় সুযোগ পেয়েও ন্যায়ের পথে থাকে, বা ক্ষমতা থাকলেও অন্যকে কষ্ট দেয় না— তার চরিত্রই শক্তিশালী। এই নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাই মানুষকে আলাদা করে, আর সেটাই পারসোনালিটি।

রিয়াজুল হক : যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর