গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
নির্বাচনী আবহে সাধারণত দলীয় প্রার্থীকে ঘিরেই লক্ষ্য করা যায় স্থানীয় নেতাকর্মী আর সমর্থকদের উচ্ছ্বাসিত ভিড়; বিপরীতে ব্যস্ততা কমে যায় মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের আঙিনায়। কিন্তু দৃশ্যপট যদি হয় একেবারে উল্টো? মনোনয়নবঞ্চিত নেতাকে অভ্যর্থনা জানাতে নদীতীরে অগণিত নেতাকর্মী, সমর্থক আর সাধারণ গ্রামবাসীর ভিড়; আর মনোনিত প্রার্থীর উঠান বৈঠকেই নেই স্থানীয়দের বড় অংশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমের পোর্টালে সুনামগঞ্জে মনোনয়নবঞ্চিত এক সাবেক যুবদল নেতার ঐ গণঅভ্যর্থনার বিরল ভিডিওচিত্র ভাইরাল হয়েছে। জানা যায়, সুনামগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়নবঞ্চিত ওই যুবদল নেতা পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। আলোচিত ওই ২৮ অক্টোবরের বিএনপির নয়াপল্টন সম্মেলনে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেডে তার এক কানের পর্দা ফেটে যায়।
সেই আসন থেকে প্রাথমিকভাবে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হয়েছেন জেলা কৃষকদলের এক নেতা। বিগত সরকারের সময় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠির সুবিধা ভোগের বিনিময়ে বর্তমানে তিনি ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে সহায়ক— এ নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া চাঁদাবাজি, দখলবাণিজ্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে স্থানীয় চক্রের মূল ক্রীড়ানক হিসেবে তার সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছেন খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ। সর্বশেষ দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি অভিযোগপত্রেও তার নাম রয়েছে।
ত্যাগীদের ব্যাকফুটে ঠেলে ভোগীদের আসন পেতে দেওয়ার অভিযোগ এটাই প্রথম বা একমাত্র নয়। দেশের একাধিক শীর্ষ সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, এরই মধ্যে অন্তত ১০ জেলার ২০টি আসনে প্রার্থী বদলের আন্দোলন চলছে। চট্টগ্রাম-২ আসনে বিএনপি ঋণখেলাপি সরওয়ার আলমগীরকে বেছে নিয়েছে; নেতাকর্মীরা বলছে, অর্থের বিনিময়ে তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। চট্টগ্রাম-৪ আসনে হেভিওয়েট নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরীকে বাদ দেওয়া নিয়ে বিস্ময় রয়েছে।
গাজীপুর-৩ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চুকে প্রার্থী করা হয়েছে; অথচ দলের দুর্দিনের কাণ্ডারি আক্তারুল আলম মাস্টার বাদ পড়েছেন। সুনামগঞ্জ-১ আসনে ক্লিন ইমেজ ও স্থানীয় যুবসমাজের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় সাবেক যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তৃণমূলের বড় অংশ বলছে, জামায়াতের প্রার্থী— সাবেক শিবির নেতা— এর বিরুদ্ধে তারুণ্যের ভোটে বাজিমাত করার সবচেয়ে মোক্ষম হাতিয়ার ছিলেন মাহবুব। বাকিরা নিজের দলেই বিতর্কিত। শতভাগ ক্লিন ইমেজ ছাড়া এবার জামায়াত প্রার্থীর টেক্কা দেওয়া অসম্ভব। সুনামগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিমউদ্দিন মিলন, তিনি ওয়ান-ইলেভেনের সংস্কারপন্থি নেতা।
নেত্রকোনা-৩ এ আওয়ামী মিত্র রফিকুল ইসলাম হিলালীকে প্রার্থী করায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ। চাঁদপুর-২ আসনে প্রবাসী নেতা জালাল উদ্দিনকে প্রার্থী করা হয়েছে— ত্যাগী মাহবুবুর রহমান শামীমকে উপেক্ষা করে। চাঁদপুর-৪ আসনে এম এ হান্নান বঞ্চিত হওয়ায় তার অনুসারীরা কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। একইভাবে অস্থিরতা বিরাজ করছে গোপালগঞ্জ-২, নোয়াখালী-৫ ও নাটোর-১ আসনে।
এই চিত্র থেকেই বোঝা যায়, মাঠ পর্যায়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে সংশ্লিষ্টরা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছেন। দিন শেষে এর দায়ভার সন্দেহাতীতভাবে দলীয় প্রধানের কাঁধেই বর্তাবে। মনোনয়ন নিয়ে নেতাকর্মীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলেও সাংগঠনিক শাস্তির ভয়ে তারা প্রকাশ্যে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না; তবু সহনশীলতার ভাঙন লক্ষণ দেখা যেতে শুরু করেছে। রাজনীতির সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিতর্কিত ও অজনপ্রিয়দের নিয়ে ভোটযুদ্ধে নামার কোনো সুযোগ নেই কোনো দলেরই।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার প্রচারের পর, তার নিষেধ সত্ত্বেও বিশেষায়িত বিশ্লেষণে তাকে বিহ্বল করে তুলেছিল এক শ্রেণি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার সাক্ষাৎকারের বিশ্লেষণে অতিরঞ্জনও দেখা গেছে। সেদিন স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লিখেছিলাম— এই মুহূর্তে সত্যিই আমাদের এমন একজন নেতা দরকার। তবে নিজের সাক্ষাৎকার আর ৩১ দফা মেনে লিখে কাগজে-কলমে উচ্চতা প্রমাণ করলেও একজন সত্যিকারের দেশনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠায় হাতে-কলমে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে তারেক রহমানকে। নির্বাচনে কেমন ব্যক্তিদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি চূড়ান্ত করেন, সেটাই জানান দেবে তার নেতৃত্বের মুন্সীয়ানা। সে হিসেবে বলা যায়, ক্ষেত্র প্রস্তুত। নিজেকে প্রমাণের মধ্যদিয়ে তারেক রহমানকে বেছে নিতে হবে ভোটযুদ্ধে জয়ী হওয়ার যোগ্য সহযোদ্ধাদের।
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহ্যে জাগ্রত আগামীর বাংলাদেশকে অটল রাখতে তার ৩১ দফার বাস্তবায়ন আবশ্যক। আর তাই কোনো অপয়া নয়, রাষ্ট্রবাদী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের সঙ্গী করতে হবে তাকে। তবেই অপশক্তির বিনাশ নিশ্চিত হবে— লক্ষ্যে পৌঁছবে : সবার আগে বাংলাদেশ।
এমএইচএস

