দুর্নীতি প্রতিরোধে ড্রোন সিস্টেম টেকনোলজি প্রয়োগ করুন
রহমান মৃধা
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৮
সারাদিন মিথ্যাচার, গুজব, পরনিন্দা, পরচর্চা এবং দুর্নীতির এক নতুন বিশ্বযাত্রা যা আমেরিকার জে এফ ক্যানেডির সময়কালের চাঁদে প্রথম লাইকা নামের কুকুরের ভ্রমণ কাহিনিকে হারিয়ে দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র নায়ক ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে, রাশিয়ার পুতিন, ভারতের মোদি পর্যন্ত, যেখানেই ঘাঁটাঘাঁটি করবেন শুধু প্রপাগান্ডা আর প্রপাগান্ডা। তবে চীনের বর্তমান ক্ষমতাসীন নেতা শি জিনপিং।
তিনি একই সাথে চীনের রাষ্ট্রপতি, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তার মুখে খুব একটা গুজব বা মিথ্যাচার শুনিনি, হতে পারে তিনি কম কথা বলেন! যাইহোক বিশ্বের অর্থনীতির যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে যুদ্ধের পেছনে, তার মাত্র ১০% অর্থ যদি ড্রোন টেকনোলজি উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়, তবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি থেকে শুরু করে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, যোগাযোগ সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সকল ক্ষেত্রে মিরাকেলের মতো পরিবর্তন আনা সম্ভব। প্রশ্ন হলো এর সাথে ড্রোন টেকনোলজির সম্পর্ক কী? হ্যাঁ, সম্পর্ক আছে; সেটা হলো সামরিক শক্তি নয়, দরকার দুর্নীতি, গুজব, ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার, মিথ্যাচার নিয়ন্ত্রণ করা, এবং সেটা এখন একমাত্র ড্রোন টেকনোলজির পক্ষেই সম্ভব যদি আমরা এই টেকনোলজিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি।
ড্রোন প্রযুক্তি ও এর প্রাসঙ্গিকতা : ড্রোন কেবল অস্ত্র নয়; এটি একটি মোবাইল সেন্সর প্ল্যাটফর্ম যা উচ্চ রেজল্যুশন ছবি, ভিডিও, জিওট্যাগড তথ্য এবং অন্যান্য পরিবেশগত ও লজিস্টিক সেন্সর ডেটা সংগ্রহ করতে সক্ষম। এই তথ্য দ্রুত খোলা হলে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন, সরবরাহ শৃঙ্খলা এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকরা ড্রোন ব্যবহার করে সরকারি বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবতা মিলিয়ে দেখেছেন, যা জনগণকে স্বচ্ছ তথ্য সরবরাহ করে।
ড্রোন প্রযুক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রসমূহ : সকল স্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাজকর্ম থেকে শুরু করে ঘুষ গ্রহণের মতো অপরাধও ড্রোন সিস্টেমের মাধ্যমে সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের তদারক করা বা হুন্ডি সংক্রান্ত দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সমাজের চাদাবাজ, সন্ত্রাসীদের মনিটরিং করা এবং আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং অবৈধ আইন প্রয়োগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। দেশের সমস্ত বর্ডার গার্ডের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি করা বা যেকোনো ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধ করতে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা জরুরি।
তথ্য সংগ্রহ ও প্রকল্প নজরদারি : ড্রোন নিয়মিত উড়িয়ে সরকারি অবকাঠামো যেমন সড়ক, সেতু, স্কুল অথবা হাসপাতালের নির্মাণ পর্যবেক্ষণ করা যায়। জিওট্যাগড ছবি এবং সময়ভিত্তিক ভিডিও থাকলে তদারকি সংস্থাগুলো বসে বসে দেখাতে পারে যে কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না।
নির্বাচনী স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক নিরাপত্তা : ভোটকেন্দ্র বা জনসভায় ড্রোন দ্বারা ভিজ্যুয়াল রেকর্ড রাখা হলে ভোট প্রক্রিয়ায় বিকৃতি বা জালিয়াতি সহজে চিহ্নিত করা যায়। অবশ্য, ব্যবহারের আগে আইনগত সীমা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং তৃতীয় পক্ষের যাচাই নিশ্চিত করতে হবে।
সাপ্লাই চেইন এবং জরুরি সেবা : ড্রোন ব্যবহার করে সরকারি সাবসিডি, ওষুধ এবং জরুরি সরবরাহ দ্রুত পৌঁছাতে পারে। তরঢ়ষরহব-এর স্বাস্থ্য ড্রোন সার্ভিস দেখিয়েছে, রক্ত, ভ্যাকসিন এবং ওষুধ দ্রুত পৌঁছে যাওয়ায় মারাত্মক মৃত্যুর হার কমেছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা পৌঁছেছে।
কৃষি সেক্টর এবং সিস্টেম অডিট : ড্রোনভিত্তিক প্রিসিশন কৃষি জমির মান নিরূপণ, সার ছিটানো বা কীটনাশক প্রয়োগ লক্ষ্য নির্ধারণে ব্যবহার করা যায়। সরকারি সহায়তা এবং বীজ/সার বিতরণে ড্রোনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে যাচাই করা হলে জালিয়াতি ধরা সহজ হয় এবং প্রকৃত প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়।
নীতি, আইন এবং ঝুঁকি : ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করার সময় গোপনীয়তা লঙ্ঘন, নজরদারি এবং সাইবার ঝুঁকি থাকে। তাই রাষ্ট্রকে অবশ্যই আইন এবং প্রযুক্তিগত সীমা নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজন: ওপেন ডেটা নীতি, এনক্রিপশন ভিত্তিক ডেটা সংরক্ষণ, স্বাধীন তৃতীয় পক্ষের যাচাই এবং নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
বিকেপি/এমবি

