জনশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করতে শিক্ষা সংস্কারের বিকল্প নেই: ড. ওবায়দুল ইসলাম
ঢাবি প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৩২
বাংলাদেশের জনশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করতে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। আর দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষা সংস্কারের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবির) ভিসি অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এক সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমাদের জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে হবে। দেশের ১৮ কোটি মানুষকে জনসম্পদে পরিণত করতে সমন্বিত ও বহুমুখী উদ্যোগ প্রয়োজন। এসব উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে চাই শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার। ফ্যাসিবাদ পরবর্তী বাংলাদেশে শিক্ষা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগে একটা কথা প্রচলিত ছিল, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত।
কিন্তু হাসিনা আমাদের কণ্ঠরোধ করতে হীরক রাজার নীতি অবলম্বন করেছিল। হীরক রাজার নীতি ছিল- যে যত বেশি জানে সে তত কম মানে। তাই জনগণকে বাধ্যানুগত করে রাখতে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে আমাদের জানার পরিধি সংকুচিত করে রেখেছিল পতিত সরকার। সেই ফ্যাসিস্ট শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেতে শিক্ষা সংস্কারের বিকল্প নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপান্তর : একটি কৌশলগত রোডম্যাপ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুস সালামের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমরা শুধু রূপান্তরের কথা বলবো কিন্তু সুযোগ সুবিধা ও বাজেট বরাদ্দ না দিলে তো সেটা হবে না। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারতে শিক্ষা খাতে বাজেট অনেক বেশি। জিডিপির প্রায় ৬%। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি মাত্র ২% এর কম।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে হলে আইসিটিসহ ল্যাব এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীদেরকে জব মার্কেটে সহজে কাজে লাগানো যায়। এককথায় দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। আমি বিশ্বাস করি বিএনপি সরকার গঠন করলে সেই বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্মমুখী ও গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষা সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিজের এই কাউন্সিল সদস্য সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে বলেন, সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা অন্য দেশের ৭ম শ্রেনীর সমান জানে। আর বাংলাদেশের স্নাতক পাস করা শিক্ষার্থীরা অন্য দেশের এসএসসি সমমানের। যা খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক স্তরে প্রয়োজন মৌলিক দক্ষতা। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। অনুরূপভাবে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় অনেকেই পাস করতে পারে না। এ সময় প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের আনন্দময় করে শিখাতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন সেমিনার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমএ কাউসার ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ঢাবির কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ, ঢাবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান বিশ্বাস, অধ্যাপক আতাউর রহমান মিয়াজী, ড. মো. নূরুল আমিন, চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় দে রিপন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম ও অধ্যাপক জাফর আহমেদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, অধ্যাপক ড. আবদুল করিম, অধ্যাপক ড. আবদুর রশিদ, অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার, শাবিপ্রবির অধ্যাপক খায়রুল ইসলামসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষ ও ঢাবির প্রক্টরিয়াল টিম এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন হলের প্রভোস্টবৃন্দ।

