শ্রেণিকক্ষের বাইরের কাজে অংশগ্রহণে জাতি হবে উজ্জ্বল আর সীমাবদ্ধতা যেন জ্ঞানহীনতার শামিল।
শিক্ষক শব্দটি কেবল একটি পেশা বা মানদণ্ডের পরিচয় নয়, এটি একটি ব্রতও বটে। তাঁরা হলেন দর্পণ স্বরূপ। দেশ ও সমাজের সেই নীরব স্থপতির মতো, যাঁরা ইট-সিমেন্টের বদলে মেধা, জ্ঞান এবং মূল্যবোধ দিয়ে গড়ে তোলেন একটি জাতির ভবিষ্যৎ।
তারা নির্ভীক সৈনিকের ন্যায় দেশে ও জাতির অগ্র নায়ক হিসেবে কাজ করেন তাই, নিঃসন্দেহে শিক্ষকরাই সমাজের আসল নায়ক। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শিক্ষানীতি এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি বিতর্ক যা শিক্ষকদের সৃজনশীল শক্তিকে ব্যাহত করার মতো।
‘শিক্ষকরা কি কেবল শ্রেণিকক্ষের চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন, নাকি তাঁরা সমাজের বৃহত্তর কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করতে পারবেন?' সে প্রশ্ন গুলো বার বার বলছে তুমি শিক্ষক তেমার সৃজনশীলতা ছড়িয়ে পরবে বিস্তৃত ভূমণ্ডলে। তাই শিক্ষক হলো সমাজের নীরব স্থপতি।
শিক্ষক যেমন পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তথ্য পরিবেশন করেন ঠিক তিনি প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে অনুসন্ধিৎসু মনন ও মানবিকতার বীজ রোপণ করেন। একজন শিক্ষক একটি সুস্থ, সচেতন ও প্রগতিশীল সমাজ নির্মাণে জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
একজন চিকিৎসক যেমন জীবন বাঁচান, কীভাবে রোগ নির্ণয় করতে হয় রোগীর সে বিষয়টি তাদের উপর নির্ভর করে। একজন শিক্ষকই কিন্তু মৌলিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই শিক্ষকরা 'নায়ক' বা 'পথপ্রদর্শক' হিসেবে বিবেচিত। শ্রেণিকক্ষের বাইরে দায়িত্বের বোঝা গুলো শিক্ষককেই নিতে হয়।
প্রায়শই দেখা যায় যে শিক্ষকরা তাঁদের মূল কাজ (শিক্ষাদান) থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন বাধ্যতামূলক প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন। যেমন নির্বাচনি দায়িত্ব (Voter Roll, Election Duty)জনগণনা ও বিভিন্ন সরকারি জরিপ। এই কাজের কারণে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হয় বলেই, ছুটির দিন বা অতিরিক্ত সময়েও তাঁদের এই দায়িত্ব পালন করতে হয়।
আর অন্যদিকে শিক্ষকরা অবসর সময়ে শিক্ষামূলক কাজ, সচেতনতামূলক কাজ, সংবাদ জগৎ থেকে বিরত রাখলে সমাজে আরো বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির মত মরণব্যাধি বৃদ্ধি পেতে থাকবে বলে আমি মনে করি।
ভারসাম্যহীনতা এবং কাঙ্ক্ষিত সমাধান পেতে হলে শিক্ষককে শ্রেণি শিক্ষার পাশাপাশি অবসর সময়গুলোতে সামাজিক কাজ যেমন সংবাদ পরিবেশন, শিক্ষাকেন্দ্র, সাংস্কৃতিক বিনোদনের মত কাজগুলো করার সুযোগ দেয়া।
কোনো শিক্ষক যদি স্বেচ্ছায় সামাজিক সচেতনতা মূলক বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন, তবে তা সমাজের জন্য কল্যাণকর। কারণ একজন সচেতন শিক্ষকই সমাজের সমস্যাগুলি সবচেয়ে ভালো বোঝেন। তাই তাদের হস্ত -পদ বেঁধে দিলে সমাজে খানা খন্দ আরো বেশি দেখা যাবে।
শিক্ষার পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের অধিকারকে সম্মান জানাতে হবে। শিক্ষকরা জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁদেরকে শ্রেণিকক্ষের কাজ শেষে তাদের ইচ্ছাকে বাধা প্রদান করে রাখা কোনো সমাধান নয়।
এনএ

